Image description

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে যখন দেশ স্বৈরাচারমুক্তির দ্বারপ্রান্তে, তার ঠিক আগের দিন ফেনীর মহিপালে ঘটে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরীহ ছাত্রদের ওপর চালানো হয় প্রকাশ্য গুলিবর্ষণ।

ঝরে যায় ৮টি তাজা প্রাণ, আহত হন অনেকে। সব মিলিয়ে ফেনীতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। এক বছর পার হলেও এখনো মেলেনি কোনো বিচার। গ্রেপ্তার হয়নি মূল হোতারা, শুরু হয়নি মামলার চার্জশিট প্রক্রিয়া। উদ্ধার হয়নি হামলায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলোও।

এই শহীদদের একজন ছিলেন ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর ফাজিলপুর (কলাতলী) গ্রামের লকিয়ত উল্লাহ সওদাগর বাড়ির সন্তান রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় ছেলে সাইদুল ইসলাম শাহী (২১)। সেদিন নিজের পকেটে টাকা না থাকায় মায়ের কাছ থেকে মাত্র ২৫ টাকা ভাড়া নিয়ে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। গুলি লাগে সাইদুলের পিঠে তিনটি এবং কানের নিচে একটি। তার লাশ পড়ে থাকে ফেনীর মহিপাল সার্কিট হাউস রোডে।

সাইদুলের মা রেহানা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ও সেদিন বলেছিল, এবার শেখ হাসিনার পতন না হলে আর কোনোদিন হবে না। প্রয়োজনে আমাকেও প্রস্তুত থাকতে বলেছিল। আমার গর্ব হয় ওর সাহসের কথা ভেবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার অভাবের সংসার, তার বাবা লেগুনা চালান। আর্থিকভাবে কখনোই স্বচ্ছল ছিলাম না, ছেলেকে ঠিকভাবে খরচ দিতে পারিনি। ৪ আগস্ট সকালে ও ২৫ টাকা চাইছিল। বলছিল, তার কাছে ২৫ টাকা আছে, আমি যদি আর ২৫ টাকা দেই, তাহলে যাওয়া-আসা করতে পারবে।  

তার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাবো। কিন্তু আমার সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে, এটাই আমার গর্ব। আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছি। খুনিদের বিচার চাই। ’

সাইদুলের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সে ফাজিলপুর ডব্লিউবি কাদেরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে বারোইয়ার হাট ডিগ্রি কলেজে ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিল। আর্থিক সমস্যার কারণে কসকাতের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে খণ্ডকালীন চাকরিও করত। সে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে হাসিনা সরকারের পতন তরান্বিত করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। অথচ যারা ওকে হত্যা করেছে, সেই মাস্টারমাইন্ডরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা জামিনে বেরিয়ে গেছে। মূল হোতারা দেশের বাইরে পালিয়েছে। আমরা চাই, হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। ’

এ বিষয়ে ফেনী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আরিফুল ইসলাম সিদ্দীকী বলেন, ‘ঘটনার পর কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত এখনো চলছে। চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’