
সরকারি নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আর রাজনৈতিক পরিচয় জানার কোনো বিধান থাকছে না— এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সচিব কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন ফর্ম বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় বা সম্পৃক্ততা সম্পর্কে আলাদা করে জানতে চাওয়া হতো। বিশেষ করে পদোন্নতি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্ব পেত।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের ধারা ‘গোপন বৈষম্য’ ও পক্ষপাতের সুযোগ তৈরি করে’— এমন বিধান বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেকোনো নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতেই এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “চাকরি পাওয়া বা পদোন্নতির জন্য কোনো ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাই বিবেচ্য হওয়া উচিত। তার রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ সরকারি প্রশাসনে পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং ‘সুস্পষ্ট পক্ষপাত’ বা ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া’র প্রবণতা কমাবে।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল ঘোষিত হওয়ার আগে কোনো প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ বিভাগের কাছে শুধু সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন চাইবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন চাইতে পারে।
সোমবারের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া কমিশন বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব’ ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
ইউএনওদের বিষয়ে যা হতে পারে
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের অধীন ন্যস্ত না রেখে তাকে সংরক্ষিত বিষয় যেমন- আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর উদ্দেশ্য হলো তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। এ ক্ষেত্রে একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব পদে নিয়োগ করতে বলেছে কমিশন।
এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বা সচিবদের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি কমিশনের ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।
প্রস্তাবিত ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসের’ বাইরে ৫ শতাংশ পদে সরকার বিশেষ কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক যুগ্ম সচিব বা সংস্থা প্রধান পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি ও আগের অভিজ্ঞতার কথা সভায় আলোচনা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিশেষ কোটায় পার্শ্ব নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের সততা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলে আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়Ñ এ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি করবে। এই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
ভূমি রেজিস্ট্রেশন দপ্তর আইন মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করার সুপারিশ শিগগিরই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সোমবারের সভায় মতামত দেন আইন ও বিভাগের প্রতিনিধিরা। পরে সভায় আলোচনা হয়, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।