Image description
পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা » রাজধানীতে চলে প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা । » অবৈধ অটোরিকশা মূলত আসে অন্য জেলা থেকে । » বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব বিআরটিএর । » অটোরিকশার জমা ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই ।

রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে চলা প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে অন্তত ৫ হাজার অবৈধ । বৈধ রেজিস্ট্রেশন , রুট পারমিটসহ দরকারি কাগজপত্র ছাড়াই এগুলো চলছে । ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ( ডিটিসিএ ) এক সাম্প্রতিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে । এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ডিটিসিএতে এক সভায় রাজধানীতে বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানো এবং অবৈধভাবে চলাচলকারী অটোরিকশা অপসারণে কঠোর ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ।

ডিটিসিএ সূত্র বলছে , বৈধ অনুমোদন ছাড়া ৫ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও পরিবহন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে । এ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গত ১৮ জুন ডিটিসিএতে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজি/পেট্রলচালিত ফোর- স্ট্রোক অটোরিকশার সংখ্যা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সভা হয় । সভায় প্রয়োজনের নিরিখে রাজধানীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে অভিমত আসে । পাশাপাশি বলা হয়, অন্য জেলার নিবন্ধিত অটোরিকশাসহ অবৈধভাবে চলা অটোরিকশা অপসারণে ডিএমপিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ।

সভা সূত্র জানিয়েছে, এতে সিদ্ধান্ত হয় , ‘প্রাইভেট’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত অটোরিকশা শুধু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে । অভিযোগ রয়েছে , প্রাইভেট হিসেবে চিহ্নিত রুপালি রঙের অনেক অটোরিকশা আসলে বাণিজ্যিকভাবে চালানো হয় । সভায় একক মালিকানার ভিত্তিতে চালকদের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার অটোরিকশা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে । এসব যানের মালিকানা ১০ বছরের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না — এমন শর্ত আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে সভায় ।

ডিটিসিএর সভায় আরও মত এসেছে, ঢাকা মেট্রোরেল ও নগর পরিবহনের ফিডার সার্ভিস হিসেবে নির্দিষ্ট রুটে অটোরিকশা চালানোর ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে । খোঁজ নিয়ে দেখা যায় , অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর বেশির ভাগ অন্য জেলার ; বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকায় এনে চালানো হচ্ছে । এসবের অনেকগুলোর রেজিস্ট্রেশন মেয়াদোত্তীর্ণ । অনেক চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই । ফলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন । এগুলো রাজধানী শহরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

সভায় বিআরটিএর উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “ সিএনজির সিলিং ( অনুমোদিত সংখ্যার সীমা ) পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বিআরটিএ তাদের মতামত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে । নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে । বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন । ' পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘ রাজধানী ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে রেজিস্ট্রেশনহীন অটোরিকশার চলাচল শুধু বেআইনিই নয় , এটা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ । বিআরটিএ দায়িত্বশীল না হলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদারকি জোরদার না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে । '

জমা ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য অব্যাহত কার্যবিবরণী ঘেঁটে দেখা যায় , সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকেরা চালকদের কাছ থেকে নির্ধারিত জমার বেশি অর্থ গ্রহণ করেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে , সভায় তা নিয়েও আলোচনা হয় । রাজপথে ঘুরে অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , মিটারে না গিয়ে যাত্রীদের কাছে ইচ্ছোমতো ভাড়া হাঁকার সঙ্গে জমার সম্পর্ক আছে । চালকদের কথা হচ্ছে , মালিকেরা যে বাড়তি জমার টাকা নেন , তা তাঁরা যাত্রীর কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করেন ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় , খুব কম অটোরিকশাচালকই মিটার ব্যবহার করেন । দর - কষাকষি করে ভাড়া ঠিক করেন তাঁরা । অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বেশির ভাগ যাত্রীই মিটারের কথা আদৌ না তুলে চালককে প্রথমে গন্তব্য বলে ভাড়া জানতে চান । মিটারে না চলতে চাওয়া এবং অযৌক্তিক ভাড়া চাওয়া নিয়ে চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা নিত্যদিনের চিত্র । অটোরিকশার মালিকেরা এখন চালকদের কাছ থেকে দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা নেন । সরকার- নির্ধারিত হার অনুযায়ী প্রতি ৮ ঘণ্টার শিফটে সর্বোচ্চ জমা ৯০০ টাকা হতে পারে ।

নাসির উদ্দিন নামের একজন অটোরিকশাচালক অভিযোগ করে বলেন, বেশি জমার টাকা জোগাড় করতেই তাঁরা ‘ বাধ্য হন ' মিটার বন্ধ রেখে বেশি ভাড়া নিতে । সভায় অংশ নেওয়া ডিটিসিএর একজন কর্মকর্তা বলেন , ‘ সরকারি নির্দেশনা মেনে মালিকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন । আর চালকেরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিটারে না গিয়ে যাত্রীদের কাছে অযৌক্তিক ভাড়া চান । ’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো . মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ' সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া এবং জমা নির্ধারণের ওপর সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ না আনলে নৈরাজ্য বন্ধ হবে না । যাত্রী , চালক ও মালিক — সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটা স্বচ্ছ ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা তৈরি করা দরকার । একই সঙ্গে অটোরিকশার যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে , তা ভাঙতে হবে । '