
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় যাত্রা শুরু করা শিপইয়ার্ডগুলো বিগত ১৬ বছরে ভারত ও আওয়ামী সরকারের ষড়যন্ত্রে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। বর্তমানে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে চরম অস্থিরতায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ শিপইয়ার্ডই। যার ফলে জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে বছরে ১২ থেকে ১৫ শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে ছলিমপুর, ভাটিয়ারী, সোনাইছড়ি ও কুমিরা ইউনিয়নে উপকূলীয় বেলাভূমিতে প্রায় দুই শতাধিক শিপইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে হংকং কনভেনশন (নরওয়ে ভিত্তিক সামুদ্রিক বিষয়ক একটি পরিবেশ সংস্থা), আইএমও (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন) গ্রীন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ওপর জোর দেয়। সর্বশেষ এর মেয়াদ চলতি বছর ২০২৫ সালের ২৫ জুন শেষ হয়। এদিকে দেশের একমাত্র এ লৌহজাত কাঁচামালের জোগান দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হংকং কনভেনশন ও আইএলও শর্ত মোতাবেক মাত্র ১৩টি শিপইয়ার্ড গ্রীন শিপইয়ার্ডে রূপান্তর হয়েছে। এসব গ্রীন শিপইয়ার্ড ব্যতীত অন্য শিপইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এতে করে অন্যান্য শিপইয়ার্ড মালিকরা পুরাতন জাহাজ আমদানি করতে এলসি খুলতে পারছে না। অধিকাংশ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ইয়ার্ড মালিকদের মধ্যে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে।
সমুদ্রের বেলাভূমিতে গড়ে উঠা ১৯০টি শিপইয়ার্ড মালিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ শিল্পের সাথে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ শত কোটি টাকা সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিগত ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে ফৌজদারহাট এলাকায় দেশের সম্ভাবনাময় শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে পরিবেশের দোহাই দিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডের শিপইয়ার্ডগুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
মোহরম ইস্পাত কারখানার মালিক কামাল পাশা আমার দেশকে বলেন, শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ইয়ার্ড মালিকেরা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে আবার অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ শিল্প থেকে বিভিন্ন রোলিং মিলের রড ও স্টিল স্ট্রাকচার বিল্ডিংয়ের সরঞ্জামাদির কাঁচামালের জোগান দিয়ে আসছে। দেশীয় অভ্যান্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে হাজার হাজার টন তামা পিতল বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মালামাল বিদেশ থেকে দ্বিগুণ দামে আমদানি করতে হবে। এবং দেশীয় বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং এই শিল্পের সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, হংকং কনভেনশন অনুযায়ী সময়সীমা কমপক্ষে দুই বছর বৃদ্ধি করা জন্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী চেষ্টা করছেন। যদি সময় বৃদ্ধি করা হয় তাহলে উক্ত সময়ের মধ্যে অধিকাংশ শিপইয়ার্ড গ্রীন শিপইয়ার্ডে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান আমার দেশকে বলেন, চলতি বছরের ২৬ জুন থেকে গ্রীন শিপইয়ার্ডের সার্টিফিকেট ব্যতীত অন্য শিপইয়ার্ডে জাহাজ কর্তন করা যাবে না। তবে ২৫ জুনের পূর্বে যেসব ইয়ার্ডে জাহাজ বিচিং করা হয়েছে সেই সব জাহাজগুলো কর্তন করা যাবে। হংকং কনভেনশনের বর্ধিত সময় চলতি বছরের ২৫ জুন মেয়াদ শেষ হয়েছে।