Image description

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ওয়াসিম আকরাম। আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। 

ওয়াসিমের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিটি দিন শোকে পার করছেন মা জোসনা বেগম। ছেলের শোকে মাঝেমধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কারণ তার নাড়িছেঁড়া ধন আর কোনো দিন চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি ফিরে দরজায় দাঁড়িয়ে মা বলে ডাক দেবেন না। 

ছেলে নেই, শুধু রয়ে গেছে তার স্মৃতি। এসব স্মৃতিই মমতাময়ী মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবেই তিনি মনকে বুঝাতে পারছেন না যে তার ওয়াসিম নেই। 

নিহত ওয়াসিম আকরাম কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগুজারা বাজারপাড়া এলাকার প্রবাসী শফিউল আলমের ছেলে। ছেলের মৃত্যুর তিন মাস পরে দেশে ফিরেন তিনি। 

ওয়াসিম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। 

কয়েক দিন ধরে ওয়াসিমের মা জোসনা বেগম অসুস্থ ছিলেন। তার কিছুটা সুস্থতার খবরে গত শুক্রবার দুপুরে তার বাড়িতে গেলে কথা হয় তার সঙ্গে। 

বাড়ির বারান্দার চেয়ারে বসে ছেলে ওয়াসিম আকরামের কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন তিনি। তিনি কান্নাবিজড়িত কন্ঠে যুগান্তরকে বলেন, ছেলেকে পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছু দেখাশোনা আমি করতাম। মা হলেও বাবা-মা দুই দায়িত্ব আমি পালন করেছি। কারণ তার বাবা প্রবাসে থাকতেন। 

মা বলেন, আমার ওয়াসিম মেধাবী ছিল। স্বপ্ন ছিল, ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবে। সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলে ওয়াসিম আকরাম আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে এক বছর হলো। 

এসব কথা বলার পর তিনি চেয়ার থেকে উঠে ভেতরে একটি রুমে প্রবেশ করেন, ছেলে ওয়াসিম আকরামের ছবি হাতে বেরিয়ে আসেন। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন তিনি। 

তিনি বলেন, ছেলের এ ছবিটি রাতে ঘুমাতে গেলে সঙ্গে রাখি। মনে হয় যেন আমার নাড়িছেঁড়া ধনকে বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছি। তার সব স্মৃতিই আমাকে বারংবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এতে মনে হয় ছেলে ওয়াসিম আকরাম এখনও আমাকে মা বলে ডাক দিচ্ছে। 

জোসনা বেগম বলেন, ওয়াসিমের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলাম। মামলার কী অবস্থা জানি না, তবে কয়েকজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে, সেটা শুনেছি। আমার ছেলের মূল হত্যাকারী রাশেদ নামের এক ছেলে।  তার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নে। এ খুনি এখনও অধরা রয়ে গেছে। আমি তার গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। 

পার্শ্ববর্তী স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসিমের মৃত্যুর পর প্রতিদিন গভীর রাতে তার বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ আসে। ওয়াসিমের মা যখন কান্না শুরু করে তখন বাড়ির সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেকুয়ার আহ্বায়ক হিরন সরওয়ার বলেন, ওয়াসিম আমার বন্ধু। তার পরিবারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে সান্ত্বনা দিই। তবে ওয়াসিমের মায়ের কান্না দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। 

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাঈনুল হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, শহীদ ওয়াসিম আকরামের পরিবারের খোঁজখবর সবসময় নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা শহীদ ওয়াসিমের পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। সামনেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।