Image description

আবু সাঈদের আত্মত্যাগের এক বছর আজ। সরকারি ঘোষণায় প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে শহীদ জুলাই দিবস। আবু সাঈদের কারণে এখন মুক্ত বাতাসে সবাই কথা বলতে পারছে উল্লেখ করে রমজান আলী বলেন ‘অনেক ভাই আমাদের বাসায় এসে বাবার পা ধরে কেঁদেছে। বলেছে, ‘আজকে আমরা আপনার ছেলের কারণেই মুক্ত।’ কেউ কেউ বলেছে, আমার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল, সেখান থেকে ফিরে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কোনো পরিবর্তন দেখি না। বর্তমানে বিচারের যে কাঠামো কার্যক্রম, বিচারগুলো যে সেইভাবে হবে, কোনো কিছু দেখছি না।’

আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে আবু সাঈদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবুনপুরে নিজ বাড়িতে আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এই দিনে শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলীর অভিযোগ, ‘আমাদের বাসায় প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে দেশের সব উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এসেছেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিও আমাদের বাসায় আসেন। সবার কাছে চেয়েছিলাম শুধু আমার ভাই হত্যার বিচার। কিন্তু এক বছরে আমরা এই বিচারের কোনো অগ্রগতি পাইনি।’

জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের স্মরণে আজ সকাল থেকেই পীরগঞ্জের বাবনপুরে সমাধিস্থল ঘিরে পরিবার, সহপাঠী ও সর্বস্তরের মানুষের ভিড়। ফুলেল শ্রদ্ধা, দোয়া-মাহফিল এবং আবেগঘন বক্তব্যে বারবার ফিরে আসছিল একটি প্রশ্ন—‘আবু সাঈদ হত্যার বিচারের অগ্রগতি কত দূর?’

আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, যিনি আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী। আজ শাহাদাত বার্ষিকীতে কবর জিয়ারত শেষে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দিল। দেশের নতুন একটি স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু সেই স্বাধীনতার কোনো আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এক বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো বিচার শুরু হয়নি। পুরো দেশ জানে পুলিশ গুলি করে মেরেছে, এটা স্পষ্ট। কিন্তু বিচার কোথায়?’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকে জুলাইয়ের ১৬ তারিখ। সরকারিভাবে শহীদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। আমি সব শহীদের জন্য দোয়া কামনা করি। যাঁরা আহত ভাইয়েরা আছেন, তাঁদের জন্যও দোয়া করি।’

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংস্কারের অভাব নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়েন রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা শুধু বাংলাদেশের নয়, একজন বিশ্ব সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু রাজনীতির কামড়াকামড়িতে তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে সময় ও সুযোগ দিলে দেশে সংস্কার হবে, মানুষ নির্বাচনের অধিকার ফিরে পাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে মারামারি-হানাহানি চলছে, সংস্কারের মাধ্যমে এগুলো কন্ট্রোলে আসবে। কিন্তু তিনি কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘দেশে পরিবর্তন আনতে সংবিধান সংস্কার দরকার। সংবিধানের ধারাবাহিকতা মেনে সংস্কার হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, মানুষ অধিকার ফিরে পাবে। আবু সাঈদের দেখানো আলোয় আমরা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে পারব।’

গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যু দেশের ছাত্র-আন্দোলনে স্ফুলিঙ্গের জন্ম দেয়, যা পরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পথ খুলে দেয়।

শহীদ দিবস উপলক্ষে পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করবেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রফিকুল আকবর, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকত আলীসহ সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় কালো ব্যাজ ধারণ, শোকযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আছেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে ‘আবু সাঈদ তোরণ’ এবং পার্ক মোড়ে ‘আবু সাঈদ মিউজিয়াম’-এর উদ্বোধন করেছেন অতিথিরা।