
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এসএ পরিবহনের কাভার্ডভ্যান আটকিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গ্রাহকের পার্সেল লুট ও ঘুষের ৯০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার সংবাদ প্রচারের পর খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন রহমান, এএসআই বিপলু বড়ুয়া, ৪ কনস্টেবলসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করেছেন হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার এই ব্যবস্থা নিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চল। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। সোমবার কুমিল্লা সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. মোদাচ্ছের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, জরুরি ডকুমেন্ট ও পার্শ্বেল বোঝাই এসএ পরিবহনের একটি কাভার্ডভ্যান গত ২রা জুলাই রাত ১০টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ৩রা জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মহাসড়কের খাঁটিহাতা থানার সামনে ওই ভ্যানটিকে আটক করেন এএসআই বিপলু বড়ুয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারা চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালায়। এ সময় গ্রাহকের বুকিং করা জিরা ও ফুচকায় ব্যবহারের মসলা জাতীয় পণ্যকে অবৈধ উল্লেখ করে জব্দ করার হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে মেমো থেকে গ্রাহকের নম্বর সংগ্রহ করে ফোনে ডেকে ঘটনাস্থলে আনেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে গ্রাহকের কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এএসআই বিপলু বড়ুয়া। পরে গ্রাহকের সঙ্গে ৯০ হাজার টাকায় রফা করেন। ঘটনাস্থলের পাশেই একটি এটিএম বুথ থেকে ২টি কার্ড ব্যবহার করে ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বিপলু বড়ুয়াকে দেন গ্রাহক উকিল আহমেদ। পরে আরও ১০ হাজার টাকা একটি বিকাশ নম্বরে পরিশোধ করেন গ্রাহক। পুলিশের দেয়া ওই বিকাশ নম্বরটি শাহেদ নামের এক সিএনজিচালকের। শাহেদ কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের বাসিন্দা। সে দীর্ঘদিন ধরে হাইওয়ে পুলিশের হয়ে সিএনজি আটক ছাড়ের দালালি করছে। গ্রাহক উকিল আহমেদ বলেন, ভ্যান আটকিয়ে তারা নানা ধরনের ভয় দেখিয়েছেন। হুমকি দিয়েছেন। গাড়িতে ৩-৪ লাখ টাকার মাল রয়েছে। তাদের থানায় বাংলাদেশ ট্রন্সপোর্টের একটি গাড়ি এক মাস ধরে আটক আছে। সেটি দেখিয়ে বলছেন মামলা করবেন। বাধ্য হয়ে তাদেরকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও ছাড়ে না। পরে আমার পার্টনারের মাধ্যমে তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে আরও ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। বিষয়টি জেনে যায় গণমাধ্যমকর্মীরা।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একটি টিম এ বিষয়ে বিপলু বড়ুয়ার কাছে জানতে গেলে গাড়ি আটকের কথা শিকার করলেও ৯০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে মিডিয়া কর্মীরা টাকা নেয়ার পক্ষে কয়েকটি প্রমাণ দিলে পুরো ঘটনাসহ ঘুষ গ্রহণের কথা স্বীকার করে গ্রাহককে ৯০ হাজার টাকা ফেরৎ দেন বিপলু। সেই সাথে ঘটনা ধামাচাপা দিতে এ বিষয়ে সংবাদ না করতে গণমাধ্যমকর্মীদের ১০ হাজার টাকা দেয়ার অপচেষ্টাও করেন বিপলু। সম্প্রতি বিষয়টি প্রচার হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসেন হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা খাঁটিহাতা থানার ওসি মামুন রহমান, এএসআই বিপলু বড়ুয়া, কনস্টেবল মো. মাস্তুত মিয়া, মো. সাকিবুল, সাহাব উদ্দিন ও মো. জহিরূল ইসলামকে ক্লোজ করে কুমিল্লা অঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছেন। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।