Image description
এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম-কমিশনার ও উপ-কমিশনার পদে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। শুধু এনবিআর নয়, এবার সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সরকারে নতুন সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত প্রশাসনে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একই বার্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়েও যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বার্থ রক্ষায় ‘সর্ষের ভিতরে ভুত’ এর মতো বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে এমনিভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনে শৃংখলা ফেরানো এবং গতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা সরকারের এই কঠোরতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সুত্রের দাবি, শুধু এনবিআর নয়, অন্যান্য সেক্টরেও ফ্যাসিক্ট হাসিনার অনুগত অসংখ্য কর্মকর্তা দাবি দাওয়া আদায়ের নামে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেস্টা করছেন। সরকার এতোদিন এই অপচেষ্টা তেমন গুরুত্ব না দিলেও আগামী নির্বাচনের আগে যাতে প্রশাসন গতিশীল হয়ে উঠে সে লক্ষ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সুত্রের দাবি প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত এমন কর্মকর্তার তালিকা করা হয়েছে যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানাভাবে অপচেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার বলেন, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানটি অনেক কঠোর, কেউ কেউ কালো আইন বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালাতে গেলে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সরকার চাইলে চাকরিতে অনুপস্থিত কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এর জন্য পিএসসির মতামত বা তদন্তের প্রয়োজন হবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপ্রতি শুরু হলেও প্রশাসনে মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৬ মাস আগে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। গতবছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনের বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন,কলম বিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই আন্দোলনের ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এই কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ দাবির মধ্যে জারি করা সবশেষ দুটি বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এবার সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। এদের মধ্যে দুপুরে আটজন, রাতে আরও ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করে দেশ পুনর্গঠনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সরকার কঠোর অবস্থানে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিনা কারণে সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলনের সাথে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘সুষ্ঠু ব্যবহার’ নিশ্চিত করতে ‘সতর্কতা’ অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্রেটের চিঠি পাঠিয়েছে বলেছে, সতর্ক না হলে প্রয়োজনে ‘বিধি মোতাবেক’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে গত জানুয়ারি মাসে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকা- আচরণ বিধি লঙ্ঘনের শামিল, অনেকক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের বিভিন্ন ব্যত্যয়সমূহ পরিলক্ষিত হওয়ায় রেগুলেটরি মন্ত্রণালয় হিসাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে এ ধরনের প্রতিটি ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’,‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ এবং ‘সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮’ অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিকে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বিধিমালা জারি করেছে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকা- আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনে বৈষম্য অস্থিরতা দুর করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সচিবালয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই আন্দোলনের ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এই কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি তৈরি করেছে। গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন।

কয়েকটি আন্দোলনের কারণে প্রশাসনে গতি ফিরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে প্রশাসনে বদলি নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে কঠোর হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১৭ বছর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চাকরিচ্যুত প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ১০ মাসেও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়া হয়নি। প্রশাসনে উপসচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির কোটাসহ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠি হয়েছে। জনগণের সেবাকে সহজ ও হয়রানিমুক্ত করতে যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, তা নিয়েই এখন বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ক্যাডার সংগঠনগুলো সরকারি চাকরির আচরণবিধির বাইরে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে অফিসের বাইরেও প্রতিবাদমুখর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনের পরিকল্পনা সংশোধন করেছে, যার মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজে বিঘœ সৃষ্টি করা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অপর দিকে ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা/দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের ওপর সরকারের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ জোরালো আকার ধারণ করেছে। আন্দোলন প্রত্যাহারের এক সপ্তাহ না যেতেই পাঁচ সিনিয়র কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সরকারের এমন কঠোর অবস্থানে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের ফেসবুক পেজ নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছেন। অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম থেকেও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।আরো কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আলোচনা চলছে। এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত দুই দিনে ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। এনবিআরের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি আদেশ জারি করা হয়। দুদক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামারুজ্জামান, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, উপ-কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া ও কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ। বিভিন্ন পর্যায়ের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর তালিকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বদলির জন্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রাথমিক তালিকায় আছেন।

জানা গেছে, সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ আবারও সংশোধন করছে সরকার। তাতে আগের চেয়ে কিছু বিষয় নমনীয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘিœত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দ-িত হবেন। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নি¤œপদ বা নি¤œ বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দ- দেওয়া যাবে। তাতে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। আর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাঁকে কেন দ- আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। তার ভিত্তিতে দ- আরোপ করা যাবে। এরপর অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এরপর এই অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার।