Image description

তানজির শেখ (২২)। কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে তিনি। আড়াই বছর আগে রবিজুল নামের এক দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় যান। দীর্ঘ নয় মাস পর দেশে ফিরেছেন তিনি। এ সময় লিবিয়ার মানব পাচারকারী মাফিয়াদের টর্চারসেলে বন্দি জীবন কাটাতে হয় তাকে। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই যুবক। ঠিকমতো খেতে দেয়া হতো না। বেঁধে রাখতো, তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিটের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় চক্রটি। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় দেশে ফিরেছেন তানজির। দফায় দফায় ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে দালাল রবিজুল। 

তানজিরের সঙ্গে আরেক ভুক্তভোগী ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগরও মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হয়েছে। লিবিয়ার মানব পাচার চক্রের টর্চার সেলে তানজির ও সাগরের মতো প্রায় ৩০০ জন বাংলাদেশিকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়। বন্দিদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মানবজমিন’র সঙ্গে ভুক্তভোগী তানজির কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তারা আমাকে বেঁধে রাখতো। তিন বেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। নির্মমভাবে নির্যাতন মারপিট, অত্যাচার করা হতো। খাবার দিতো না, তিনবেলা শুধু মারতো। মারতে মারতে শরীর ফাটিয়ে ফেলতো। ক্ষত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পচে যেতো। 

তানজির বলেন, তারা কোনো ওষুধ দিত না। সারাদিনে ৫ টাকা দামের একটা পাউরুটি ও অল্প একটু লবণাক্ত পানি খেতে দিত। এতে শরীর আরও বেশি পচে যেতো। না খাওয়ার কারণে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। সকল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এভাবে মার খেতে খেতে অনেকে মরে যায়। মনে হতো আমিও মারা যাবো। ভুক্তভোগী যুবক বলেন, ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৯ মাস পর আমি মুক্তি পেয়েছি। আমার সঙ্গে ওইখানে থেকে ঝিনাইদহের সাগর নামে একজন মুক্তি পেয়েছে। আমরা ছাড়া পাওয়ার আগের রাতে দু’জন মারা গেছে। তাদের একজনের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদেরকে মারতে-মারতে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের দু’জনেরই হাত-পা পচে গিয়েছিল। 

তিনি বলেন, ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য আমাকে মারতে মারতে গুরুতর অসুস্থ করে ফেলেছিল। টাকা না দিলে তাদের নির্যাতন চলতেই থাকে। ফ্রিতে কাউকে ছাড়ে না। টাকা দিলে ছেড়ে দেয়। আমি দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি থাকার পর অবশেষে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। ট্যাক্সিতে করে একটা জায়গায় আমাদের নামিয়ে দেয়। এরপর সাগরের মামার কাছে আমরা আশ্রয় নিই। সেখানে কিছুদিন থাকার পর এম্বাসির মাধ্যমে আমরা দেশে ফিরে আসি। তানজির বলেন, রবিজুল আমার পরিবারের কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাই। একই সঙ্গে রবিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মানব পাচারের অভিযোগে বেশক’টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি। কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তানজিরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।