Image description

কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলায় আহত বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার (৪৫) মারা গেছেন। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

জানা যায়, গত রোববার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে ভারুয়াখালীর ফাতেরঘোনা এলাকায় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শফিকুর রহমানের ছোট ভাই।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলটির কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল বহুদিন ধরে। তারই রেশ ধরে আমার ভাইদের পরিকল্পিতভাবে মারধর করা হয়। যারা হামলা করেছে, তারা সবাই পরিচিত মুখ।

তার অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং তার জামাতা মিজান, সহযোগী মুজিব ও এনাম— এই চারজন পরিকল্পিতভাবে তার ভাইদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

ঘটনার পর আহত অবস্থায় রহিম উদ্দিনসহ আরও কয়েকজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় কক্সবাজার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

কক্সবাজার জেলা যুবদল সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভারুয়াখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রহিম সিকদারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে জামায়াত নেতারা। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ নূর জানান, রহিম উদ্দিন ছিলেন দলের সক্রিয় ও জনপ্রিয় কর্মী। এলাকায় তার অনেক সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তার ওপর হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জানা যায়, রহিম উদ্দিন সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার শহর সেক্রেটারি রিয়াজ মুহাম্মদ শাকিল জানান, পতিত একটি জমি নিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির সাথে আরেকটি পক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। সেখানে জামায়াত নেতা বলে যে নোমানের কথা বলা হচ্ছে; তার সাথে দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, এই ঘটনা জমি নিয়ে ব্যক্তিগত বিরোধ। সেখানে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জাহেদুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের আগে মসজিদের জমিটা আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছিল। দেশে পটপরিবর্তনের পর মসজিদ কমিটি পুনরায় সেই জমি দখলে নেয়। কিন্তু গত ১৩ জুলাই বিএনপির আহত ও নিহত নেতাদের নেতৃত্বে মসজিদের জমি দখলে গেলে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা বাধা দেন। এখানে জামায়াতে ইসলামীকে জড়ানো অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

এদিকে, কক্সবাজার জেলা জামায়াত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তিও দাবি করেছেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নূর আহমেদ আনোয়ারী।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত মিজানকে আমরা আটক করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্তে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।