Image description

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্রয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ পরিণত হয়েছিলেন দানবে। পুলিশের চেইন অব কমান্ড তিনি মানতেন না। বলতেন, আমিই চেইন অব কমান্ড। কাকে ধরতে হবে, কাকে মারতে হবে কিংবা সভা-সমাবেশ পণ্ড করতে হবে শেখ হাসিনার ফোন পেলেই হলো। কাজে লেগে যেতেন।

নিজেও সরাসরি ফোন করতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রয়োজন হলে সরাসরি চলে যেতেন গণভবনে। প্রধানমন্ত্রীও তাকে ডেকে নিতেন। প্রধানমন্ত্রীর বাইরে বিশেষ সম্পর্ক ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও পলাতক তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে। ফলে একদিকে যেমন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে দাঁড়ান, তেমনি দুই হাতে কামিয়ে অঢেল অর্থবিত্তের মালিক বনে যান।

পুলিশ বাহিনীসহ সর্বত্র তিনি ডিবি হারুন এবং পরে ভাতের হোটেলের হারুন নামে পরিচিতি পান। এ সময় তিনি ‘হাউন আঙ্কেল’ নামেও জোকসে পরিণত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়ে শেখ হাসিনার দৃষ্টি কাড়েন। তার আরো বিশেষ কৃতিত্ব হচ্ছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের দিন কাকরাইল মোড়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে তা বিএনপির নামে চালিয়ে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড করা। অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও ডিবি হারুন সম্পর্কে জানা গেছে নানা তথ্য।

জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ডিবি হারুনও পালিয়ে যান। ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৮ আগস্ট সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত তিনি ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে ছিলেন। ওই দিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে তিনি একটি প্রাইভেট কারে আখাউড়া সীমান্তে চলে যান। সেখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা হয়ে ১৬ আগস্ট যান নেপালে। পরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট লুসিয়ায় যান। সেখান থেকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছেন। ডিবি হারুনের স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে আগে থেকেই ফ্লোরিডায় ছিল। তারা সেখানে গ্রিন কার্ডধারী। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালাতে সক্ষম হন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীতে শেখ হাসিনার খুবই আস্থাভাজন এমন দানবীয় রূপের কর্মকর্তা ছিলেন ৫ জন। তারাই মূলত পুলিশ বাহিনী চালাত। এর মধ্যে তৎকালীন আইজি বেনজীর আহমেদ এবং হারুন ছিলেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে সবার উপরে। ক্ষমতার দাপট এবং শেখ হাসিনার কত কাছের হওয়া যায় এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধও ছিল। মাঝেমধ্যে বেনজীর আহমেদ ডিবি হারুনকে চেইন অব কমান্ডের কথা শুনালে তিনি শুনিয়ে দিতেন, আমিই চেইন অব কমান্ড। পুলিশ বাহিনীকে সে সময় এভাবেই চালিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা।

অপকর্ম করে ডিবি হারুন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন যেভাবে

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। হাওর এলাকা কিশোরগঞ্জের গ্রাম থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছিলেন। ঠাঁই হয়েছিল ছাত্রদের হলে। ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার। ২০তম বিসিএসে পুলিশে যোগ দেন তিনি। এর পরই হাতে পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। ২০তম বিসিএসের কর্মকর্তা হয়েও তিনি সিনিয়রদের টপকিয়ে ডিআইজি পদোন্নতি হাতিয়ে নেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ডিএমপিসহ ভিআইপি এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে নানা অপকর্ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে আদায় করতেন মোটা অংকের টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশকারা পেয়ে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।

তার অপকর্মে পুলিশ বিভাগ বিতর্কের মধ্যে পড়লেও কেউ তার ভয়ে টুঁ-শব্দ করার সাহস পেতেন না। সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। প্রথমে ডিবির দায়িত্ব দেওয়া হলেও জুলাই আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে তাকে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বিভাগে পাঠানো হয়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পুলিশের দুই ইউনিট নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার এসপি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ক্ষমতার দাপটে তিনি শুধু গাজীপুর থেকেই তুলেছেন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া হারুন ছিলেন ডিএমপির আট ক্রাইম ইউনিটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার। এসব ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হয়েছেন। আসামি ধরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া, বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে এনে টাকা আদায়, জমি দখলে সহযোগিতা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, কোম্পানি দখল ও অবৈধ রিক্রুটিং ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে গাজীপুর, আশুলিয়া, কক্সবাজার এবং রাজধানীর উত্তরায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জে গড়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। সেই রিসোর্টটি তার। কিন্তু চালাকি করে তিনি অন্যজনকে মালিক করেছেন। এলাকায় সবাই তার রিসোর্ট বলেই জানে। আশুলিয়ার নন্দন পার্কে তার শেয়ারের তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার সহায়-সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় উত্তরাতেই নামে-বেনামে প্রায় ১২টি সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িটির মালিক হারুন। ৫ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে ১০ কাঠার দুটি প্লট, ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে একটি ৫ কাঠার প্লট, ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট এবং সোনারগাঁও জনপথ রোডে একটি ৬ তলা বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদক।

সূত্র জানায়, খিলক্ষেতে দেড় হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে দুদক। উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে ৮ তলা বাড়ির মালিক হারুন। এছাড়া ১ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে ৭.৫০ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। ১৫ নম্বর রোডে ৭.৩৪ কাঠা জমির ওপর ১৪ তলা একটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে তার। উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে আরেকটি মার্কেট রয়েছে তার। ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর প্লটটি তার।

দুদক জানায়, গাজীপুরের সবুজপাতা রিসোর্টের মালিকানা ও সাভারের নন্দন পার্কে তার শেয়ার রয়েছে। বনানী কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে ২০ কাঠার প্লট দখল করেছিলেন হারুন। টঙ্গীর ২৭ নম্বর মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে একটি টাওয়ার রয়েছে হারুনের। সূত্র জানায়, টঙ্গীর ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভেতর ১২ বিঘা জমিতে রয়েছে একটি রিসোর্টের মালিক হারুন। এছাড়াও টেকনাফের মেরিনড্রাইভ এলাকায় হারুনের সম্পদের খবর পাওয়া গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির ১০ কাঠা প্লটে দশ তলা মার্কেট করেন শ্বশুরের নামে। ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৭ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং ১৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে রয়েছে একটি বাণিজ্যিক ভবন। উত্তরার রবীন্দ্র সরোবরে ৫ কাঠার একটি প্লটের খবর পেয়েছে দুদক কর্মকর্তারা। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৫ কাঠার একটি প্লট আছে হারুনের। একই সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় হারুনের একটি অফিস আছে। মাঝে মধ্যে এখানে আসতেন তিনি। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের উত্তরা স্মৃতি কেবল টিভি লিমিটেডের পাশে ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে হারুনের। আর ওই সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর প্লটে হারুনের ছয়তলা ভবন রয়েছে।

সূত্র জানায়, হারুন যত অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তার বেশিরভাগ অর্জন করেছেন গাজীপুর জেলার এসপি থাকাকালীন। তিনি ওই জেলায় কথিত ডিবির প্রায় ১০টি দল গঠন করেছিলেন। প্রতি রাতে ডিবির একাধিক দল নেমে পড়ত টার্গেটকৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে মজুত রাখা হতো ইয়াবা, অস্ত্র ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। সুযোগ বুঝে ওইসব জিনিস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতো রাজনৈতিক নেতা, নিরপরাধ ব্যবসায়ী ও ধনী পরিবারের সন্তানদের।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হারুন পালিয়ে যান। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে হেলিকপ্টারে করে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। এরপর জানা গেছে, হারুন আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি নিরাপত্তার জন্য সেনা হেফাজতে ছিলেন। সেনা হেফাজত থেকে বের হয়ে তিনি আমেরিকা পালিয়েছেন।

হারুনের অপকর্মের পাঁচ সহযোগী

শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ভর করেছিলেন। বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে বিরোধী মতের ওপর অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করে দমন-নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। যে যত বেশি বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের দমন ও নিপীড়ন চালিয়েছে তাকে দ্রুত পদোন্নতি ও পদকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ। তিনি ডিবিতে কথিত ভাতের হোটেল খোলেন। এই ভাতের হোটেলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সেলিব্রেটি পারসন, চলচ্চিত্র-নাটকের নায়ক-নায়িকা, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা পেশার লোকজনকে তার সঙ্গে বসে খেতে দেখা গেছে। তাদের খাইয়ে কৌশলে এসব ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ছাড়তেন। তার ভাতের হোটেলের খপ্পরে পড়েন খোদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

সেগুলো নিয়ে সমালোচনা হলেও তিনি কোনো পাত্তা দিতেন না বরং আরো বেশি বেশি করে তিনি ওই ভিডিও আপলোড করতেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সমন্বয়কদের ডিবিতে ধরে এনে জোর করে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশকারায়ই তিনি পুলিশের মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের সময় তার বিষয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বরং তার পদোন্নতি হয়েছে। বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, চাঁদাবাজি, জিম্মি করা, আটকে রেখে নির্যাতন, জমি দখল, গুম ও মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ এমন কোনো অভিযোগ নেই যা তার বিরুদ্ধে ছিল না। সর্বশেষ তার কর্মস্থল ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)। তিনি অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা এসপির পর হারুন ডিবিতে পোস্টিং পান। এই ডিবিতে তিনি নিজের একটি বলয় গড়ে তোলেন। বিষয়টি খোদ তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার জেনেও মুখ খুলতে পারেননি শুধু হারুনের প্রভাবের কারণে। ডিএমপি কমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন বিষয়টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও হারুনকে কিছু বলেননি। এতে দিন দিন তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ডিবিতে তার বিরুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা টুঁ-শব্দ করলে তাকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মকর্তা ট্যাগ লাগিয়ে ডিবি থেকে অন্য কোনো স্থানে পোস্টিং করতেন। তার এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ডিবির ওয়ারী জোনের ডিসি আবদুল আহাদ।

আহাদকে ডিবি থেকে বিদায় করে দেওয়ার জন্য তিনি তাকে বিএনপির কর্মকর্তা বলে প্রচারণা চালান। তাকে বিদায় না করতে পেরে তিনি এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে ডিবিতে পরিকল্পিতভাবে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ করান। পরে বিষয়টি প্রমাণ না হলেও হারুনের ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার কোনো উদ্যোগ নেননি।

সূত্র জানায়, ডিবিতে তার পঞ্চপাণ্ডব বলে ৫ জন কর্মকর্তা পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম ডিবির মতিঝিল জোনের এডিসি রফিকুল ইসলাম। তিনি হারুনের ডান হাত বলে পরিচিত। তিনিও ৫ আগস্টের পরে পলাতক আছেন। হারুন ওই রফিকুলকে দিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করাতেন। জমি দখল ও টাকা উদ্ধারে পারদর্শী ছিলেন রফিকুল। বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ধরে নিয়ে নির্মম মারধর করেছিলেন রফিকুল। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের বাসায় গিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন এই রফিকুল।

সূত্র জানায়, হারুনের পঞ্চপাণ্ডবের আরেকজন হলেন সাইবার বিভাগের নাজমুল আলম। কিছুদিন আগে তার নামে একটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। তিনি মামলার পর পলাতক আছেন। তার নামে পরিকল্পিতভাবে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যেসব ইউটিউবারের ভিউ বেশি ছিল তাদের তিনি ডিবিতে ডেকে তার নামে ইউটিউব অ্যাকাউন্টটি নিজের নামে করাতেন। নওগাঁর এক ইউটিউবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর এমন একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, হারুনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন শাহেন শাহ। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনকে বিভিন্ন অজুহাতে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করতেন। ৫ আগস্টের পর তিনি জেল হাজতে গেছেন। তার নামে ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রায় ২০টিও বেশি অভিযোগ পড়েছে।

সূত্র জানায়, হারুনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন ৩০তম ব্যাচের এডিসি মনিরুল ইসলাম। হারুনের টাকা পাচারে তিনি বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এছাড়া মাফিয়া এস আলমের যোগাযোগ ছিল এই মনিরুলের সঙ্গে। সূত্র জানায়, হারুনের অন্যতম আরেক সহযোগী ছিলেন এডিসি আসমা আরা জাহান। তিনি ডিবি-মাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেড় বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাদা মহিউদ্দিনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৩৪ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন হারুন ও আসমা। পরে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার এর সমাধান করেন।