Image description
পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয় ৩৫০০ জনকে নানা ব্যয়ের নামে তুলে নেয়া হয় ৫ হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম তার দখল করা ব্যাংকগুলোতে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয় হাজার হাজার লোকবল। কেনাকাটার নামে বের করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেই পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয় সাড়ে তিন হাজার লোকবল। যা ব্যাংকটির মোট জনশক্তির ৭০ শতাংশ। আর কেনাকাটার নামে বের করে নেয়া হয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কী প্রক্রিয়ায় লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে, এর সাথে কারা জড়িত ছিলেন এবং কেনাকাটার নামে কী পরিমাণ অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ব্যাংকটির এ সংক্রান্ত নোটশিট ও নথি পর্যালোচনা করে দেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে পতিত সরকার, ২০১৭ সালে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের কাছে আটটি ব্যাংক ছেড়ে দেয়া হয়। একই পরিবারের কাছে এতগুলো ব্যাংকের মালিকানায় দেয়ার পর ব্যাংকগুলোতে হরীলুট শুরু করে। একদিকে ব্যাংকগুলো থেকে কোনো প্রকার নিয়মনীতি না মেনেই বানের পানির মতো অর্থ বের করে নিয়ে যায়, পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে নিজ এলাকার হাজার হাজার লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। একদিকে অর্থ বের করে নেয়া অপরদিকে হাজার হাজার লোকবল নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বাড়িয়ে তোলা হয়। এভাবে ইসলামী ব্যাংকেই সাত বছরে নিয়োগ দেয়া হয় প্রায় ১০ হাজার লোকবল। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে নিয়োগ দেয়া হয় সাড়ে তিন হাজার। এভাবে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পরে নাম পরিবর্তন করে আভিভা ফাইন্যান্সে হাজার হাজার লোকবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।

এর ফলে কয়েকটি ব্যাংক এখন গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। বিশেষ করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্স থেকে গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না।

এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে কী প্রক্রিয়ায় লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে, লোকবল নিয়োগের কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, এমনকি এসব নিয়োগের সাথে কারা জড়িত ছিলেন সে বিষয়ে তদারকি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশষ তদন্ত দল। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে তদন্ত শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে মোট জনবল রয়েছে পাঁচ হাজার। এর মধ্যে এক হাজার ৫০০ জন যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আর তিন হাজার ৫০০ জনকে ২০১৭ সালের পর নিয়োগ দেয়া হয় কোনো প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই; অথচ ব্যাংকগুলোতে সঠিক লোকবল নিয়োগ দেয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত দল।

এ দিকে শুধু লোকবলই নিয়োগ দেয়া হয়নি, পাশাপাশি বিভিন্ন কেনাকাটার নামেও অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে। এক টাকার জিনিস ১০০ টাকা, কেনাকাটার প্রয়োজন নেই, অথচ টাকা লুটপাটের নামে বাহুল্য কেনাকাটা দেখানো হয়েছে। এসব প্রক্রিয়ার সাথে এস আলমের অনুগত কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এদের বেশিরভাগই এস আলমের সাথে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। ব্যাংকের এক প্রাথমিক হিসেবে কেনাকাটার নামে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে, চ’ড়ান্ত প্রতিবেদনে তা আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত দল এসব বিষয়ে তদারকি শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংকগুলোতেও তদন্ত করা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।