Image description
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জেলার আক্রান্ত ৫ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার পানি নেমে গেছে। ঘর থেকে পানি নামলেও কিছু কিছু জায়গায় বাড়ির উঠানে ও গ্রামীণ সড়কে পানি রয়েছে। মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর সীমান্তবর্তী ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বেড়িবাঁধের  ভাঙনের সংখ্যা শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২০টি স্থান থাকলেও এক রাতের ব্যবধানে সেটি বেড়ে ৩৬ টি স্থানে গিয়েছে।

সরজমিন দেখা যায়, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপে জেলার পাঁচ উপজেলা আক্রান্ত হয়। দুই উপজেলা পুরো ও তিন উপজেলা আংশিক আক্রান্তের পর পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। ফেনী-পরশুরাম ও ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়ক থেকে পানি নামলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে কিছু কিছু স্থানে এখনও তলিয়ে রয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। সড়ক বেহাল থাকায় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলাচলরত ছোট যানবাহনগুলো ব্যাগ পেতে হচ্ছে। ভাঙাচোরা, খানাখন্দেভরা সড়কগুলো দিয়ে স্থানীয়দের চলাচল করতে হচ্ছে। ফুলগাজীতে বিস্তীর্ণ মাঠের বীজতলা ও সবজির খেত পানিতে পঁচে গেছে। উপজেলার দরবারপুরের কৃষক আবদুল মালেক বলেন, বন্যায় তাঁর সব নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে, অথচ হাতে কোন অর্থকড়ি নেই।

উপজেলায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির বড় ক্ষতি হয়েছে। মুন্সীরহাট ইউনিয়নের কমুয়া চানপুর গ্রামের রাসেলের একটি ষাঁড় এবং উত্তর দৌলতপুর এলাকার জসিম উদ্দিনের একটি গাভী মারা গেছে। বিজয়পুরের “বিসমিল্লাহ পোল্ট্রি” খামারের মালিক হাসান জানান, তাঁর খামারে ১ হাজার ৫০০ মুরগি মারা গেছে। এতে  খামারের অবকাঠামোসহ সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারেক মাহমুদ জানান, বন্যায় কবলিত গবাদিপশু (গরু ও ছাগল) প্রায় ৪৮০টি, ৩১ হাজার ৭০০টি হাঁস-মুরগি মারা গেছে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, উপজেলায় ১ হাজার ৩০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ২৭৮ হেক্টর। এতে আনুমানিক ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া জানান, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও ল্যাট্রিন সংকটে ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।  উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, ফুলগাজী সদর ও মুন্সীরহাট এলাকায় সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত চিত্র পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

টানা তিনদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও এবং উজানের পানি নদীর অনেক নিচে নামলেও বেড়িবাঁধের ভাঙন এক লাফে বেড়ে ৩৬টি স্থান হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ভাঙন শনিবার দুপুর পর্যন্ত যেখানে ২০টি স্থান ছিলো সেখানে কয়েক ঘন্টায় লাফিয়ে বেড়ে যায় ৩৬টি স্থান। এরপরও শনিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানাচ্ছে বাঁধের ভাঙ্গার স্থান আরো বাড়তে পারে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার মধ্যে শুধু ভাঙন এলাকার নাম অনুযায়ী ভাঙনস্থলের সংখ্যা জানতে পেরেছি। শুক্রবার থেকে পাউবো’র কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিয়েছেন। বিগত চারদিন ধরে ২০টি ভাঙনের তথ্য থাকলেও এখন বেড়েছে, যা আরও বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, যেসব ভাঙনস্থল গভীর হয়েছে সেগুলো দিয়ে এখনো নদীর পানি গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁধের ভাঙন অংশের মেরামত কাজ শুরু হবে।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ফেনীতে গত ৮ জুলাই থেকে বন্যার প্রভাব শুরু হয়। এতে আক্রান্ত হয় ফেনীর পাঁচ উপজেলা। সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলাসহ ছাগলনাইয়া (আংশিক), ফেনী সদর (আংশিক) ও দাগনভূঞা (আংশিক) উপজেলায় প্লাবিত হয় ১১২টি গ্রাম। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলায়ায় বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হলেও ফেনী সদর এবং দাগনভূঞার কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত সকলে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়েছে। এদিকে বন্যার কারণে গত ১০ই জুলাই চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পরীক্ষা ফেনীতে বন্ধ থাকলেও ১৩ই জুলাই রোববার থেকে পূর্বের পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী সকল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হযেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার একটি পত্রের মাধ্যমে শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলো।