Image description

ছোট্ট একটি দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে ছেড়ে দেওয়া হয় ২০–৩০টি গুলগুলি (মিষ্টান্ন)। সেগুলো ভাজা শেষ হতেই বাসনে তোলা হয়, আর তখনই একে একে বিক্রি হয়ে যায় সব কটি। এমন দৃশ্য দেখা যায় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার রাংটিয়া মোড়ে।

৪০ বছর ধরে মাত্র এক টাকায় গুলগুলি বিক্রি করছেন মো. মমিন (৬৫) ও তাঁর ভাই আলতাফ হোসেন (৫০)। দুই ভাই মিলে এই দোকান চালান।

মমিন বলেন, তাঁদের দোকান খোলা থা‌কে বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার গুলগুলি বিক্রি হয়। সাধারণত ময়দা, চিনি, কালোজিরা ও  নারকেল দিয়ে তৈরি এই গুলগুলি গরম গরম পরিবেশন করা হয়। নিত‌্যপ‌য়োজনীয় প‌ণ্যের দাম বাড়‌লেও এক পয়সা দাম না বাড়িয়ে এত বছর ধরে বিক্রি হওয়া মিষ্টান্নটি স্বাদ ও দামের কারণে এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।

এত বছর ধরে একই দামে গুলগুলি বিক্রি করছেন কীভাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মমিন বলেন, ‘যখন ময়দা ও চিনির দাম কম ছিল, তখন গুলগুলির আকার কিছুটা বড় ছিল। উপকরণের দাম বাড়ায় আকার ছোট করেছি, কিন্তু দাম এক টাকাই রেখেছি।’

মমিনের ছোট ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গুলগুলির আকার ছোট করার পর চাহিদা বেড়েছে। কারণ, এগুলো আকারে ছোট হওয়ায় মচমচে ভাজা হয়, এতে স্বাদ আরও বেড়েছে। প্রতি‌দিন মানুষ দূরদূরান্ত থে‌কে গুলগু‌লি খে‌তে চ‌লে আসেন। অনে‌কেই খাওয়ার পর বা‌ড়ির জন‌্য নি‌য়ে যান। ত‌বে প্রতি‌দি‌নের চে‌য়ে সপ্তা‌হে শুক্র ও শ‌নিবার ক্রেতার ভিড় বে‌শি হয়।’

৪০ বছর ধরে মাত্র এক টাকায় গুলগুলি বিক্রি করছেন মো. মমিন (৬৫) ও তাঁর ভাই আলতাফ হোসেন (৫০)
৪০ বছর ধরে মাত্র এক টাকায় গুলগুলি বিক্রি করছেন মো. মমিন (৬৫) ও তাঁর ভাই আলতাফ হোসেন (৫০)ছবি: প্রথম আলো

দুই ভাই বলেন, গুলগুলি তৈরির উপকরণ সকালেই স্থানীয় মুদিদোকান থেকে বাকিতে নিয়ে আসেন। পরে রাতে বিক্রির টাকা দিয়ে সেই বাকি পরিশোধ করেন তাঁরা। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার গুলগুলি বিক্রি হয়, যার অর্ধেকই লাভ থাকে।

দোকানটি স্থানীয়দের কাছে যেমন পরিচিত, তেমনি দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ আসেন এই এক টাকার গুলগুলির স্বাদ নিতে। জামালপুরের মেলান্দহ থেকে গারো পাহাড়ে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী মো. উবাদুল্লাহ বলেন, ‘এখা‌নে গুলগু‌লির সুনা‌ম শু‌নে‌ছি। এখন খে‌য়ে দেখলাম। এত সস্তায় এত স্বাদ পাওয়া যাবে ভাবতেই পারিনি।’

গুলগু‌লির দোকান থে‌কে ২০-২৫‌ মিটার দূর‌ত্বে রাং‌টিয়া বন বিভা‌গের কার্যালয়। সেখা‌নকার রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল ক‌রিম ব‌লেন, ‘এলাকাসহ জেলাজু‌ড়ে এই মিষ্টান্নের দারুণ চা‌হিদা। প্রতি‌দিন মানুষ ভিড় ক‌রেন। আমা‌দের অফি‌সে কেউ এলে এই গুলগু‌লি দি‌য়ে আপ‌্যায়ন করি। গুলগু‌লির জন‌প্রিয়তা দে‌খে বাজা‌রে আরও ক‌য়েক‌টি দোকান হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে ক্রেতা‌দের কা‌ছে দুই ভাইয়ের এক টাকার গুলগু‌লির চা‌হিদাই বে‌শি।’