
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ হাসিনাকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক সংস্থা হেলথ পলিসি ওয়াচ-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুতুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুদকের মামলা চলমান থাকায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে কার্যকর হয়েছে তার ছুটি।
গেল বছরের শুরুতে WHO-এর এই পদে যোগ দেন পুতুল। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তার মা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রভাবেই পদটি বাগিয়ে নেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে সব ক্ষমতাসীনদের শিক্ষা নিতে বলেছেন তিনি।
শনিবার ১০টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মারুফ কামাল খান বলেন, ‘ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে, রাষ্ট্রীয় মেশিনারি ও অর্থের অপব্যবহার এবং নানান কারসাজি করে, ইন্ডিয়ার সমর্থন ও সহায়তায় হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে তার কন্যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বসাতে পেরেছিলেন। ওই পদের জন্য তার উপযুক্ততা ছিল না বলে তাকে প্রার্থী হিসেবে যোগ্য দেখাতে অনেক জাল-জোচ্চুরিরও আশ্রয় নিতে হয়েছিল’।
তিনি বলেন, ‘হাসিনার ক্ষমতার পাশা উলটে যাবার পর দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার কন্যা সায়মা (ওয়াজেদ) পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও শুরু করেছে’।
‘এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে পুতুলকে। তারাও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়েছে। এই সব অভিযোগে তার পদচ্যুতিও ঘটতে পারে। বাধ্যছুটি হয়তো সেটারই প্রথম ধাপ’।
এই ঘটনা ইতিহাস হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ইতিহাস থেকে পরবর্তী সমস্ত ক্ষমতাসীনদের শিক্ষা নিতে হবে। নচেৎ ঘটবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি’।
এদিকে, হেলথ পলিসি ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস এক সংক্ষিপ্ত অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে কর্মীদের জানান, শুক্রবার থেকে পুতুল ছুটিতে যাচ্ছেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ডব্লিউএইচও'র সহকারী মহাপরিচালক ড. ক্যাথারিনা বোহম ‘অফিসার ইন চার্জ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বোহম ১৫ জুলাই মঙ্গলবার নয়াদিল্লির অফিসে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল, যিনি গত আগস্টে দেশে বিক্ষোভ শুরুর পর পালিয়ে যান এবং তার আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগপ্রক্রিয়া ঘিরেই এ অভিযোগের সূত্রপাত।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পুতুল দায়িত্ব নিলেও তার নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল যে, তার প্রভাবশালী মা শেখ হাসিনা তার পক্ষে প্রভাব খাটিয়েছেন।
হেলথ পলিসি ওয়াচের আগের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে।
দুদকের আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র অনুযায়ী, পুতুল আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রচারণার সময় নিজের একাডেমিক রেকর্ড সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেন, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) এবং ৪৭১ (জাল দলিল ব্যবহার) ধারার লঙ্ঘন।
দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম জানান, পুতুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার একটি সম্মানী পদ দেখিয়ে যোগ্যতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় অস্বীকার করেছে।
এছাড়া, পুতুলের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বাধীন সুচনা ফাউন্ডেশনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তার বিস্তারিত দেয়নি দুদক।
এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা (প্রতারণা ও অসদাচরণে সম্পত্তি গ্রহণ) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ।
অভিযোগ দায়েরের পর থেকে পুতুল বাংলাদেশে গ্রেফতারের আশঙ্কায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে সফর করতে পারছেন না।