
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের ভোট দিতে হবে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পোস্টাল ব্যালট প্রকল্প নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া আর কোনো নির্বাচনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে অষ্টম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা থেকে ভোটগ্রহণে অনিয়মের দায়ে কেবল কেন্দ্র নয়, পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, প্রার্থীদের হলফনামা, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ বিশেষ আইন, ইসি সচিবালয় আইন, দল নিবন্ধন অগ্রগতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় সীমানা নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়।
এদিন এক দফা বিরতিসহ প্রায় সোয়া ছয় ঘণ্টা ধরে কমিশন সভাটি হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার আইটিবেইজড পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। ভোটাররা অনলাইনে ভোট দেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে পারবেন।’
সানাউল্লাহ জানান, ভোটে কারচুপি হলে কেন্দ্র বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের ছিল। যেটি ছিল না, সেটি হচ্ছে পুরা নির্বাচনী আসনের ভোট বন্ধ করা। যেটি একসময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল; এটিও তারা ফেরত পাওয়ার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা আশা করছেন, সরকার তাদের আগের সে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে। তিনি বলেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও আর কোনো ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। তবে ইসির ইভিএমগুলো কী করা যায় তা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখের জন্য নতুন করে কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংশোধিত হলফনামা আইন অনুযায়ী প্রার্থীর দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে হলফনামায় তার ঘোষণা ও সনদ জমা দিতে হবে। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে প্রার্থীর সারাজীবনের মামলাসংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।
সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশনে সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগে নির্বাচন কমিশন সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। যেসব দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পেরেছে, তাদের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যারা পারেনি, তাদের ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও এনআইডি সংশোধনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা, মাঠ প্রশাসন সমন্বয়ে ইসির ৫ কমিটি
আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পাঁচটি বিশেষ সমন্বয় ও তদারকি কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত এসব কমিটি আইনশৃঙ্খলা, মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী অনিয়ম তদন্ত এবং প্রবাসী ভোট নিয়ে কাজ করবে। গতকাল ইসির উপসচিব শাহ আলম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত আলাদা অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে আছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি একই সঙ্গে প্রবাসী ভোট ও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সমন্বয় কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে নির্বাচনী আইন, বিধি-প্রবিধিবিষয়ক কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। মাঠ প্রশাসন সমন্বয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এ ছাড়া নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তদারকি কমিটির নেতৃত্ব দেবেন নির্বাচন কমিশনার তহমিদা আহমদ।