
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চামড়াজাত পণ্য। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানিতে নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। তাদের শঙ্কা, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে রপ্তানি তুমুল প্রতিযোগিতায় পড়বে। মার্কিন ক্রেতারা কম দামে পণ্য পেতে বিকল্প দেশ খুঁজবেন। এতে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছে। আগের ১৬ শতাংশসহ এ হার দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে। মার্কিন আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে ১০০ ডলারের একটি পণ্য নিলে নিজ দেশে শুল্ক দিতে হবে ৫১ ডলার। এ পরিস্থিতিতে সে দেশে পণ্যের বিক্রি কমে যেতে পারে।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ থেকে সেখানে বছরে ৮ থেকে ১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির এ অঙ্ক আরও বড়। ইপিবির তথ্যমতে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম চামড়া ব্যবহার করে অন্যান্য পণ্য, যেমন– সুটকেস, হ্যান্ডব্যাগ, লেডিস ও জেন্টস ব্যাগ, ওয়ালেট, অ্যাক্সেসরিজ ইত্যাদি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৭ কোটি ডলারের। তবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে এ রপ্তানির পরিমাণ আরও বেশি।
উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করছে। ফলে রপ্তানি কমবে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের উচিত দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও কূটনৈতিকভাবে ফের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে। শুল্ক না কমালে অন্তত প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান রাখতে হবে।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও লেদারেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল হোসেন সমকালকে বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বেশি। অন্তত তাদের সমপরিমাণ থাকলেও বাংলাদেশ কিছুটা নিরাপদ স্থানে থাকবে। যদি সত্যিই তা বহাল থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ কমে যাবে। ফলে দেশের রপ্তানি কমে যাবে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল আউয়াল বলেন, শুল্ক বাড়লে পোশাকের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়বে চামড়া খাতের রপ্তানিও। চীন, ইউরোপ, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানি করে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চীনে। কিন্তু চীনের রপ্তানিতে এমনিতেই অত্যধিক শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে চীনের বায়াররা বাংলাদেশকে চামড়ার দাম কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্ক কম। ফলে বায়াররা কম দামে আমদানির জন্য বিকল্প দেশ খুঁজবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করা চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর।
চামড়া খাতের রপ্তানি ধরে রাখতে আবদুল আউয়াল তিনটি পরামর্শ দেন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোতে শুল্ক কমানোর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোরালোভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তৃতীয়ত, এসব উদ্যোগে সচল না হলে সরকারকে রপ্তানিতে ভর্তুকি দিয়ে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখতে হবে।
বিএফএলএলএফইএর সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, বাংলাদেশি পণ্য সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলে তারা বেশি দরে জুতা ও চামড়াজাত পণ্য কেনা কমিয়ে দেবে, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানিতে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, তারা সীমিত আকারে রপ্তানি শুরু করেছেন। তবে শুল্ক তাদেরও রপ্তানি ব্যাহত করবে।