Image description
 

শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা থেকে নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা ও বাবার বিরুদ্ধে করা মামলায় মেয়ে মেহরীন আহমেদ (১৯) আদালতে বলেছেন, ‘আমি মা-বাবার পাপেট (পুতুল) নই। আমাকে কেন গালি দেবে। আমাকে কেন তারা শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তা করে। আমি আমার সুরক্ষা চাই।’

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এ কথা বলেন মেহরীন।

এর আগে গত ২২ জুন বাবা নাসির আহমেদ ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে নিজের সুরক্ষা চেয়ে একই আদালতে মামলা করেন রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী মেহরীন। এ মামলায় আজ মা-বাবার উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের শুনানির দিন ধার্য ছিল।

 

শুনানিতে মেহরীন মা-বাবাকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘তাদের (বাবা-মা) মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে এসেছি এটা আমার দোষ না। আমি তাদের পাপেট (পুতুল) নই। আমাকে কেন গালি দেবে। আমাকে শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। আমাকে তারা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। ব্রেইন অ্যান্ড মাইন্ড হাসপাতালে আমাকে দুই বছর রাখা হয়। সেখানে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে। আমাকে কেন ওই হাসপাতালে রাখা হলো, জানতে চাই।’

 
 

মেহরীন বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম একটা সুন্দর জীবন; কিন্তু আমি তা পাচ্ছি না। আমি আমার সুরক্ষা চাই। আমি জাস্টিস চাই।’ এ সময় আদালতে মেহরীন তার বক্তব্যের বেশির ভাগই ইংরেজি ভাষায় বলেন।

 

মেহরীনের বক্তব্যের সময় তার মা জান্নাতুল ফেরদৌস কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে শুনতে থাকেন। অন্যদিকে তার বাবা নাসির আহমেদ অপলক দৃষ্টিতে মেয়ের বক্তব্য শুনতে থাকেন।

এদিকে শুনানিতে মেহরীনের মা-বাবার পক্ষে আইনজীবী আবুল হোসেন আদালতে বলেন, মেহেরীন তার মা-বাবার একমাত্র সম্বল, একমাত্র আশা-ভরসার স্থল। মা-বাবাও চান তাদের মেয়ে সুরক্ষার আদেশ পাক। দেশের বাইরে তাদের সামর্থ্য অনুসারে মেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। শুনানি শেষে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানান তিনি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসফাকুর রহমান গালিব জানান, আদালত আজ উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। এ সময় বাদীপক্ষ থেকে জানানো হয়, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বাদী পরিবারের সদস্যদের অবহেলা ও তাদের দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। তাই তিনি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ অনুযায়ী সুরক্ষা আদেশ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় ব্যয়ভারের জন্য আবেদন করেছেন।

এদিকে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৫ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসায় বাদী মেহরীন আহমেদকে তার মা জান্নাতুল ফেরদৌস ও বাবা নাসির আহমেদ শারীরিকভাবে আঘাত করতে থাকেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এবং তাকে মেরে নিলাফুলা জখম করেন। বাদী একজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তারা তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অপমান ও নির্যাতন করে যাচ্ছেন। তারা প্রতিনিয়ত পরিবারের নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহারে বাধা দেন।

আরও বলা হয়, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে যেসব সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে, তা থেকে তাকে বঞ্চিত করে এবং বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হয়। তারা মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা শারীরিকভাবে তাকে আঘাত করে নির্যাতন করেছে। যার মাধ্যমে সহিংসতা ঘটেছে।