
ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য ছিল। দুদক প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। মামলায় এস কে সিনহার বিরুদ্ধে নিজের ভাই ও আত্মীয়ের নামে সাত কোটি ১৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করে তা স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় নিজের নামে একটি প্লট বরাদ্দ নেন। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামেও রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান।
এরপর প্রভাব খাঁটিয়ে তিন কাঠার প্লটটি পাঁচ কাঠায় উন্নীত করান। একপর্যায়ে পূর্বাচলের প্লটটিকে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে (বাড়ি নম্বর ১/এ) স্থানান্তর করিয়ে রাজউকের অনুমোদন করান। বরাদ্দ পাওয়ার পর এস কে সিনহা প্লটটির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়োগ করেন তারই আত্মীয় শঙ্খজিৎ সিংহকে।
অনুসন্ধানে দুদক প্রমাণ পায় যে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই উত্তরার ওই প্লটের অনুকূলে রাজউকে মোট ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে তার তত্ত্বাবধানেই ওই প্লটে নয়তলা ভবন নির্মাণ হয়। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ছয় কোটি ৩১ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা। নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এ নির্মাণব্যয় প্রাক্কলন করে দুদক।
দুদকের মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজউকের প্লটের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া ভবনের নির্মাণব্যয় ছয় কোটি ৩১ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা। সব মিলিয়ে এ বাবদ সাত কোটি ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে জনৈক খালেদা চৌধুরীর কাছ থেকে ভবনের একটি ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম ৭০ লাখ টাকা নেয়া হয়। এ টাকা বাদে অবশিষ্ট ছয় কোটি ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা এবং আত্মীয় শঙ্খজিৎ সিংহের নামে একটি ব্যাংক হিসাবে স্থায়ী ও নগদে ৭৮ লাখ টাকা জমা পাওয়া গেছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
দুদকের অভিযোগ, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট সাত কোটি ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। যা তিনি ভাই ও আত্মীয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন। এ সম্পদ অর্জনের বৈধ কোনো উৎস নেই এবং তা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
এ অপরাধে সংস্থাটির ২০০৪-এর ২৭ (১) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায় মামলা করে দুদক।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় পৃথক দু’ ধারায় ঢাকার একটি আদালতে এস কে সিনহার ১১ বছর কারাদণ্ড হয়। সূত্র: বাসস
শীর্ষনিউজ