Image description
 

সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সরকারের এমন ঘোষণা পেয়ে নওগাঁয় মাঠে নেমে পড়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেশি সরব দেখা গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি।

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে ৬টি সংসদীয় আসন। বিএনপি, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও জামায়াতে ইসলামী নওগাঁর ৬ আসেনেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ও গণ অধিকার পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ পর্যায়ে, গ্রামে-গঞ্জে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নিজের বিষয়ে জানান দিচ্ছেন তারা।

 

নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত) আসনে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন নুরুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, নেয়ামতপুর উপজেলা বিএনপি, ২০০৭ সালের মহাজোটের পদপ্রার্থী ছিলেন তিনি। এছাড়া রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। মাসুদ রানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পোরশা উপজেলা বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সালেহীন আহমেদ।

 

এই আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক। তিনি বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের কাছে দোয়া প্রার্থনা এবং সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে মোরশেদুল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় পরিষদ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও দলটির কেন্দ্রীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্য সচিব নিশাত আহম্মেদ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয়। তিনি ইউনিয়নভিত্তিক উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর রয়েছেন।

এ আসন থেকে জামায়াত এনামুল হককে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

মোঃ ওয়ালিউল হাসনাত, যুগ্ম আহ্বায়ক, গণ অধিকার পরিষদ নওগাঁ জেলা, মাঠে তৎপর রয়েছেন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে।

নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট ও সাবেক সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে বিএনপি নেতা পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি।

এখানে জামায়াতে ইসলামী মাহফুজুর রহমানকে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এ আসনে আবু সাদাত সৌখিন, সদস্য সচিব, গণ অধিকার পরিষদ, নওগাঁ জেলা, মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

নওগাঁ-৪ (মান্দা) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মতিন, মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী টিপু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী।

জামায়াতে ইসলাম এই আসনে জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিবকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

সেলিম হোসেন, আহ্বায়ক, গণ অধিকার পরিষদ, মান্দা উপজেলা, তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং মাঠ পর্যায়ে তিনিও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) নিয়ে গঠিত। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু।

এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে আরও সরব রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আ স ম সায়েমকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ নওগাঁ জেলা, নওগাঁ সদরের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ আসনে এবি পার্টি থেকে কাজী আতিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী এবং রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ খবিরুল ইসলামকে।

এস এম সাব্বির হোসেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক, যুব অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, নওগাঁ-৬ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সকলের সাথে কুশল বিনিময় ও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুবক্কর সিদ্দিক নান্নু বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে মনোনয়নপ্রাপ্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সকল নেতাকর্মী দলের স্বার্থে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে একতাবদ্ধ থাকবেন।’

জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। এখানে কোনো ধরনের গ্রুপিং, লবিং বা দলীয় বিভাজনের স্থান নেই। দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্য আমাদের প্রধান শক্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক, নৈতিক ও আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমরা সৎ, যোগ্য ও আদর্শ প্রার্থীকে চূড়ান্ত করেছি। দলের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করবেন, ইনশাআল্লাহ।’

নওগাঁয় এ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি ও জামায়াতই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল পর্যায়ে এই দুই দল দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত সংগঠন ধরে রাখতে পেরেছে বলেই এত দ্রুত মাঠে নামতে পেরেছে। তবে জেলার ৬টি আসনের প্রতিটিতে জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে একাধিক গ্রুপিং রয়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও গণ অধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দেখা গেলেও নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন কিংবা এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।