
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় বছর পার করতে চলেছে। এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও আশানুরূপ বিনিয়োগ না আসায় সমালোচনা আছে সরকারের। তবে, বিনিয়োগ আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই অংশ হিসেবে এবার বিনিয়োগ খুঁজতে চীন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
সরকারের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন বিডার একটি প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব থাকবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। প্রতিনিধিদলটি চীনের প্রধান চারটি বাণিজ্যিক শহর বেইজিং, সাংহাই, হংকক ও গুয়াংজু সফর করবেন। সংশ্লিষ্ট শহরগুলোতে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।

বিডার চেয়ারম্যানের চীন সফরের কারণ জানতে চাইলে সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিডার প্রতিনিধিদলটি চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিটিং করতে যাচ্ছেন। তারা চীনের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিটিং করবেন। তারা মূলত বিনিয়োগকারী খুঁজতে যাচ্ছেন। বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের জন্যই এ সফর।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সফর উপলক্ষ্যে বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে। দূতাবাস চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে, এখন পর্যন্ত কতগুলো বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক নিশ্চিত হয়েছে তা জানা যায়নি।
বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দীর্ঘদিন ধরে এফডিআইয়ে গতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ ৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। যা আগের বছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) ছিল ১২৭ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ১৪১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার

জুনে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের একটি দল নিয়ে ঢাকা সফর করেন। ওই সফরে চীনের ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫০ জন প্রতিনিধি ছিলেন। সফরের আগে বিডার প্রত্যাশা ছিল কিছু চীনা বিনিয়োগের ঘোষণা আসবে।
চীনা প্রতিনিধিদল ঢাকায় অবস্থানকালে বিডা চেয়ারম্যান প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন, আগামী ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে কিছু বিনিয়োগ আসবে। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগ নিয়ে আসা একটা লম্বা প্রক্রিয়া।
বিদেশি বিনিয়োগ আনা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, চেষ্টা করলে বিদেশি বিনিয়োগ অবশ্যই আসবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনেক দেরি করে ফেলেছে। এ সরকারের তো প্রায় বছর হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দরকার ছিল। একটা বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে এবং চেষ্টা করা হচ্ছে। চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখন জ্বালানির দাম অনেক বেশি, সুদের হারও অনেক বেশি। চীন বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশকে যেটা করতে হবে, তাদের ভালো প্যাকেজ দিতে হবে যাতে তারা আগ্রহী হয়।
চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন বিডার একটি প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব থাকবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। প্রতিনিধিদলটি চীনের প্রধান চারটি বাণিজ্যিক শহর বেইজিং, সাংহাই, হংকক ও গুয়াংজু সফর করবেন। সংশ্লিষ্ট শহরগুলোতে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা
‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে খুব বেশি আগ্রহী নয়’ বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। বলেন, ‘হয়তো নির্বাচনের আগে সেরকম কোনো বড় বিনিয়োগের ঘোষণা নাও আসতে পারে। কারণ, নতুন সরকার আসলে তারা নীতি পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। ওই চিন্তা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা করছেন। তারা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়, নির্বাচন দেখতে চায় এবং একইসঙ্গে কী নীতি হলো পাঁচ বছরের জন্য; সেটাও তারা দেকতে চায়। এ জায়গাতে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা দোলাচল থাকতে পারে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দীর্ঘদিন ধরে এফডিআইয়ে গতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ ৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। যা আগের বছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) ছিল ১২৭ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ১৪১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছিল ১৭১ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাত বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি বাধার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নতুন করে বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণের উচ্চ সুদহার। বর্তমানে ১৬ শতাংশ সুদের কারণে নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে।