
১৩ বছর পার হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পিছিয়েছে ১১৯ বার।
অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনেও মিলছে না বহুল আলোচিত এ জোড়া খুনের তদন্তের কোনো অগ্রগতি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক মেহেরুন রুনি ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাগর সরওয়ার। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেছিলেন। তবে গত ১৩ বছরেও ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়নি! শুরুতে মামলার তদন্ত করছিল শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ, পরে ডিবি। কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকায় ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। ১১ বছরেও র্যাব চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। সবশেষ ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তভার র্যাব থেকে সরিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেন উচ্চ আদালত। কিছুদিন পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে গঠিত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স। তাতেও কোনো অগ্রগতি আসেনি।
আইন ও বিচার বিশ্লেষকদের মতে এমন আলোচিত মামলায় বছরের পর বছর তদন্ত ঝুলে থাকা শুধু রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা নয়, এটি বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়।
জানা গেছে, গতকাল ৮ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ছিল পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার। তবে তা সম্ভব না হওয়ায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত নতুন করে ১১ আগস্ট ১২০তম তারিখ নির্ধারণ করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, ডিএনএ ও ফরেনসিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কিছু ডিজিটাল আলামত পুনর্বিশ্লেষণের কাজ চলছে। তবে মামলার ‘মোটিভ’ বা ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। টাস্কফোর্স বহুল আলোচিত এ প্রয়াত দম্পতির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত তানভীর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে তানভীরকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্পর্শকাতর এবং বহুলচর্চিত এ মামলার তদন্তের স্বার্থে তানভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বিশেষ প্রয়োজন। আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই তাঁর সঙ্গে কথা হবে। ২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের সামনে নিহত রুনির সঙ্গে তানভীরের দেখা হয়।
নিহত সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মুনির বলেন, ‘এত বছর ধরে শুধু সময় নিচ্ছে, অথচ কিছুই করছে না। আমার ছেলের হত্যার বিচার আমি বেঁচে থাকতে দেখতে পারব কি না জানি না। আমি এখনো মনে করি ইচ্ছাকৃতভাবেই তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।’ সাংবাদিক সংগঠনগুলো প্রতিবছরই এ হত্যাকান্ডের দ্রুত তদন্ত ও বিচার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্ধারিত তারিখ বারবার পেছানোয় হতাশ স্বজনরা, ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিইউজে, বিএফইউজে, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার, সাংবাদিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সবাই প্রশ্ন তুলেছে, ‘কেন সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না? নাকি সাগরু-রুনিকে কেউ খুন করেনি!