Image description

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পরশুরাম উপজেলা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপরে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ১৪টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পরশুরামের জঙ্গলঘোনা, অলকা, শালধর এবং ফুলগাজীর দৌলতপুর, দেড়পাড়া ও উত্তর শ্রীপুর। এসব এলাকায় স্রোতের তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, ভেঙেছে রাস্তাঘাট।

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট গাইনবাড়ী এলাকার আছমা আক্তার বলেন, ‘রাতেই পানি ঢুকেছে। কিছু জিনিস ওপরে তুলেছি, কিন্তু খাবার বা বিশুদ্ধ পানি কিছুই নেই।’ পরশুরামের নাপিতকোনা গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, ‘বাঁধ রক্ষা করতে আমরা নিজেরা চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। এখন প্রতিবেশীর বাড়িতে আছি, কিন্তু খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎও নেই।’

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, ফুলগাজী ও পরশুরামে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে, রান্না করা খাবারের ব্যবস্থাও আছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার অন্তত সাতটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় শতাধিক মানুষ রয়েছে, তাদের শুকনো ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে ফেনী-পরশুরাম সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহর থেকে সরাসরি আর পরশুরাম যাওয়া যাচ্ছে না। ছাগলনাইয়া হয়ে বিকল্প পথে চলাচল করছেন অনেকে। আবহাওয়া অফিস গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে গতকাল বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার জানান, উজানে বৃষ্টি না কমলে ভাঙনের ঝুঁকি থাকবে।

সংকটে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর

এদিকে বৃষ্টির কারণে পানি বাড়তে শুরু করেছে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চলগুলোয়। টানা বর্ষণে নোয়াখালীর হাতিয়া ছাড়া বাকি আটটি উপজেলা ও পৌর এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ভেসে গেছে মাছের ঘের। ক্ষতির মুখে আমনের বীজতলা ও শাকসবজির খেত। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো গতকাল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা ও কিছু শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

লক্ষ্মীপুরে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ক্ষতির মুখে আমনের বীজতলা ও শাকসবজির খেত।

এদিকে বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বেড়েছে চট্টগ্রাম নগরে। সেখানে বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা ও রাস্তায় খানাখন্দের কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুর শহর ও আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। শহরের বিষ্ণুদী এলাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসাইন বলেন, ‘দোকানের সামনে হাঁটুপানি জমেছে। ক্রেতা আসছে না। বৃষ্টি এমনভাবে চলতে থাকলে দোকানে পানি ঢুকে যাবে।’