
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জটিল রোগীর সংখ্যাও। রোগীদের অনেককেই রাখতে হচ্ছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গুজ্বরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৬ জন। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বর্তমান ধরনকে ‘পরিবর্তিত’ উল্লেখ করে বিশেষ চিকিৎসা সহায়তার ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন আগের মতো সহজভাবে মোকাবিলা করার জায়গায় নেই। রোগের ধরন বদলাচ্ছে। অনেক রোগীর অবস্থা দ্রুতই জটিল হয়ে উঠছে। এতে করে বাড়ছে নিবিড় পরিচর্যার চাহিদা। বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ শাখার পক্ষ থেকে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ডেঙ্গুর ধরন বদলানোয় এখন রোগীদের মধ্যে জটিল উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এজন্য পোর্টেবল আলট্রাসনোগ্রাম ও বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিনের প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক বেশি। এসব যন্ত্রপাতি (চিকিৎসা সরঞ্জাম) থাকলে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। যা চিকিৎসা কার্যক্রমকে গতিশীল করে। জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।
এ সময় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানান, বরগুনায় কিছুদিন আগে ডেঙ্গুর একটি আউটব্রেক (প্রাদুর্ভাব) দেখা দিলেও বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সারা দেশেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতিও রয়েছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
সভা শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক বিভিন্ন চিকিৎসা বিভিন্ন সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে, ৮টি পোর্টেবল আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ২১টি বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিন, ১ হাজার ৬০০ পিস ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী। ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধিরা জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৯৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৬৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৩ জন, খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩১ জন, রংপুরে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময়ে সারা দেশে ৪৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ১২ হাজার ২২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৩ হাজার ৫৯৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি পরবর্তী জমে থাকা পানি এবং বাড়তি তাপমাত্রা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়িয়ে তুলছে। তাই শুধু সরকারি ব্যবস্থার ওপর ভরসা না করে, ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।