Image description
 

বিবিসির সাম্প্রতিক একটি ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে শহীদ মিরাজ হোসেনের বীরত্বপূর্ণ জীবন ও তাঁর শহীদ হওয়ার মর্মান্তিক মুহূর্তের নানা অনন্য চিত্র। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এক মিছিলে একদম বাম পাশে মাথায় ও হাতে পতাকা নাড়াচ্ছেন সাদা চেক শার্ট পরা এক তরুণ—তিনিই শহীদ মিরাজ হোসেন। এই ভিডিওটি তাঁর শহীদ হওয়ার মাত্র আড়াই ঘণ্টা আগের।

বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে, ঠিক ওই স্থানেই, পুলিশের অতর্কিত গুলিতে শহীদ হন মিরাজ। তিনি ছিলেন একেবারে মিছিলের সামনের সারিতে, ভিডিও করছিলেন পুলিশের গণহত্যার দৃশ্য। বিবিসির ডকুমেন্টারিতে তাঁর হাতে ধারণকৃত সেই ভিডিওগুলোর কয়েকটি দৃশ্য স্থান পেয়েছে, যা পুলিশের নৃশংসতার ভয়াবহ বাস্তবতাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছে।

মিরাজের বন্ধুরা জানান, তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও অটল। আগের আন্দোলনের দিনগুলোতেও যখন পুলিশ গুলি ছুড়ত, সবাই দৌঁড়ে পালালেও মিরাজ থাকতেন সামনে। তিনি বলতেন, “সবাই যদি গুলির ভয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে আন্দোলনটা সফল হবে কীভাবে!”

 

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকেই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন মিরাজ। এবারের ‘জুলাই বিপ্লব’ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। আন্দোলনে যাওয়ার আগে বন্ধুদের সাবধান থাকতে বললেও, মিরাজ জবাব দিতেন, “এত সাবধান থাকলে দেশ স্বাধীন হবে কীভাবে?”

 

৫ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের ফোনে ডাকেন শনিআখড়া লংমার্চে যোগ দেওয়ার জন্য। নিজের টাকায় বন্ধুদের পতাকা কিনে দেন। বিজয় মিছিলের সময়, যখন জনস্রোত হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবরে আনন্দিত, তখনই ঘটে বিপর্যয়।

দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে, যাত্রাবাড়ী থানার ভেতর থেকে ছোড়া পুলিশের গুলিতে একে একে ১০-১২ জন প্রাণ হারান। গুলির একটি সরাসরি লাগে মিরাজ হোসেনের বুকে। মৃত্যুর আগেও তিনি সরে যাননি পিছু, বরং শেষ মুহূর্তেও ছিলেন সবার সামনে। তাঁর নিথর দেহ পরে পড়ে থাকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে, শহীদের মতো শান্ত ঘুমে।

বিবিসির ডকুমেন্টারিতে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তের অসাধারণ সাহসিকতা ও আদর্শের নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। মিরাজ এখন শুধু একটি নাম নয়, আন্দোলনপ্রিয় যুবসমাজের কাছে একটি প্রেরণা, একটি সাহসিকতার প্রতীক।