
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসহ ৫১ জনকে মাথায় গুলি করে পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে ‘হেডশট’ করে নির্মম এই হত্যাকান্ড চালায় ছাত্রলীগ ও তার দলদাস পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য। জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনে আইনগত কোনো নীতিমালাই মানেনি সরকার। রাষ্ট্র তার জনগণকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। সে সময় পুলিশ সদস্যদের কথা শুনে মনে হতো না যে তারা সরকারি চাকরিজীবী, মনে হতো তারা ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী।
বুধবার বিকালে বাংলামটরের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সপ্রান (সকল প্রাণের নিরাপত্তা) আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরো বলেন, নিরপরাধ মানুষের হত্যাকে বৈধতা দেয়ার জন্য সরকার রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী ইত্যাদি বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করতো। জাতি হিসেবে সহিংসতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার উচিত বলে মনে করেন বক্তারা। অন্যথায় জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ ব্যর্থতায় নিমজ্জিত হবে। বক্তারা আরো বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ক্রমাগতহ খুনি হয়ে উঠেছিল। আমাদের পুলিশের আইনগুলো ঔপনিবেশিক আমলের। পুরো পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক ড.নবখতিয়ার আহমেদ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, সাংবাদিক জিনা তাসরিন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ল’ এর প্রভাষক সাদমান রিজওয়ান অপূর্ব, শহীদ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান ওমরের ভাই সিরাজুল ইসলাম, শহীদ আতিকুর রহমানের ভাই সোলাইমানের প্রমুখ।
মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান ওমরের ভাই সিরাজুল ইসলাম কান্না জড়িত কণ্ঠে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন সময় পুলিশি নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন,আমার মা ছোট ভাই ওমরের মৃত্যুকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। মা সব সময় বলতো বাবা ওমর তুই সব সময় ছোট থাকবি, কখনো বড় হবি না। মা প্রতিরাতে আমার ভাইয়ের জন্য কান্না করে আর বলে ওমর আমাকে এভাবে অসময়ে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। আমি কোনোদিন সেটা ভাবতেও পারিনি। দেশের জন্য আমার প্রিয় সন্তান হারিয়েছে, আমি আমার আদরের ভাই হারিয়েছি। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশবাসী কাছে আমাদের প্রতি শহীদ পরিবারের দাবি তাদের আত্মত্যাগের কথা আমরা ভুলে না যাই। সরকারের কাছে একজন শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।