
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘী পার্কের ওয়াকওয়ে দেবে গেছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নজরে আসে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওয়াকওয়ে দেবে যাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল প্রবেশে জনসাধারণকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট-বাড়ির উঠান, আমন বীজতলা ডুবে গেছে।
এদিকে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ মাঠ, কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) মোড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব স্থানে প্রায় এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে আছে সড়ক। এছাড়া পৌর শহরের লামচরী, সমসেরাবাদ ও মজুপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানিবন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ। অনেকের পুকুর ডুবে ভেসে গেছে মাছ। শহর ও আশপাশ এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল ও যত্রতত্র ভরাট হয়ে পড়ায় এ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পৌরবাসী। একই অবস্থা সদর উপজেলার আবিরনগর ও লাহারকান্দি গ্রামেও দেখা গেছে। সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ, মৌলভীরহাট, কমলনগরের তোরাবগঞ্জসব বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানের বীজতলা ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জেলার রামগতির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহওয়া পর্যবেক্ষক সোহরাব হোসেন জানান, সোমবার (৬ জুলাই) রামগতিতে ১৬১ মিলিমিটার, মঙ্গলবার (৭ জুলাই) ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৬ টা থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রামগতিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপের কারণে সোমবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে।
সরকারি কলেজ এলাকার বাসিন্দা রোজি বেগম, সুমন হোসেন ও রাকিব হোসেনসহ কয়েকজন জানান, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না কেউ। বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রায়ই দেখা দেয়। কিন্তু ঠিকমতো বিল পরিশোধ করতে হয়। কিছু কিছু এলাকায় ড্রেন থাকলেও তা সময়মতো পরিষ্কার করে না। বর্ষার আগ মুহূর্তে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা জরুরি ছিল। ড্রেন পরিষ্কার না করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে খোয়াসাগর দিঘীর ওয়াকওয়ে দেবে গেছে। ঘটনাটি আমাদের নজরে রয়েছে। আশা করছি কেউ সেখানে যাবে না। আমরা নিষেধ করেছি, দেবে যাওয়া ওয়াকওয়েতে কেউ যেন প্রবেশ না করে।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে মূলত নাগরিক সচেতনতার অভাব দায়ী। নাগরিকরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অবাধে খাল দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের কারণেও পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হলেও তেমন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আমরা খালের উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল পরিষ্কার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের আগস্টে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ও পরে ফেনী-নোয়াখালীর বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৮ লাখ মানুষ ২ মাস পানিবন্দি ছিল।