Image description

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে হাইকোর্ট চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২২ সালে চাকরি হারানোর পর প্রায় তিন বছর ধরে আইনি লড়াই শেষে আদালতের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পেয়েছেন তিনি। হাইকোর্টের রায়ের পর আমার দেশকে নিজের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

তিনি এখন ঢাকায় হাইকোর্টে আছেন। রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিন বছর ধরে অপেক্ষা করেছি এই একটা লাইনের জন্য ‘আপনি নির্দোষ, আপনাকে ফিরিয়ে নেওয়া হোক’। আজ সেই লাইনটা আদালতের মুখে শুনেছি। আমি হেরে যাইনি।

২০২২ সালের কোনো কারণ না দেখিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় শরীফ উদ্দিনকে। কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের দুর্নীতির অনুসন্ধান করছিলেন তিনি। কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিলেন, তারপরই ‘সাবধান করে’ দেওয়া হয় তার ভাষায়, সতর্কবার্তা নয়, ওটা ছিল চাকরি হারানোর আগাম ঘণ্টা। মা বলেছিলেন, ‘তুই মাথা নিচু করিস না’

যেদিন চাকরি গেল, সেদিন মা শুধু বললেন, ‘তোকে যখন সত্যের পক্ষে দেখে চাকরি কেড়ে নিল, তুই মাথা নিচু করিস না’। আজ মনে হচ্ছে, আমি মাথা উঁচু রেখেই হেরেছি, তাই জিতেছি।

তিন বছরের এই সময়টা কেমন কেটেছে জানতে চাইলে বলেন, মানসিক মৃত্যু বলতে যা বোঝায়, প্রতিদিন সেটা মরে থেকেছি। পরিবার, সমাজ, বন্ধুবান্ধব-সব জায়গায় আমাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। আমি শুধু বলতাম, ‘আমি চুরি করিনি, দুর্নীতি করিনি’। কিন্তু কেউ শুনতে চায় না সেই সত্য। আমি একটা গালি হয়ে গিয়েছিলাম-‘দুদক থেকে বের করে দেওয়া লোক।

শরীফ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের বয়স এখন সাড়ে চার বছর। তার নাম ঈশা সাইফান। আমি যখন চাকরি হারাই, তখন ও এক বছর বয়স। ও কখনো আমাকে অফিসে যেতে দেখেনি। ও শুধু জানত, তার বাবা চাকরি খুঁজছে। আজ আমি বলেছি, ‘তোর বাবা চাকরি ফিরে পেয়েছে। ওর চোখে কী আলো দেখেছি, সেটা আমি কাউকে বোঝাতে পারব না।

‘আমি যদি তখন চুপ করে থাকতাম, কারও নাম না লিখতাম, কারও ফোনে ধরা দিতাম, তাহলে আজও আমার চাকরি থাকত। কিন্তু আমি জানতাম, আমি রাষ্ট্রের টাকায় দুর্নীতির খবর গোপন করতে পারি না। আমি শুধু সৎ থাকতে চেয়েছিলাম, সেটারই শাস্তি পেয়েছিলাম।’ বলেন শরীফ

চাকরিতে ফিরবেন কি না-জানতে চাইলে শরীফ উদ্দিন বলেন, আদালত আমাকে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে বলেছে। আমি ফিরব। আমি সেই টেবিলে আবার বসতে চাই, আবার ফাইল খুলে দুর্নীতির প্রমাণ লিখতে চাই। এখন আমি ভয় পাই না। আমি জানি, অন্যায় কতই বড় হোক, একদিন সে মাটিতে পড়বেই।

শেষে একটু চুপ করে থেকে বলেন, এই রায় শুধু আমার জন্য না, এই রায় প্রতিটা সেই অফিসার, সেই তরুণ, সেই মানুষটার জন্য-যে সৎ থাকতে চায়, কিন্তু বারবার হেরে যায়। আজ প্রমাণ হলো-আপনি একা হলেও, সত্যের পাশে থাকলে একদিন জিতবেন।