বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ নাম মাহফুজ আলম। প্রথমে ছিলেন উপদেষ্টার মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। পরে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ উপদেষ্টা করে সরকার, তবে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম প্রধান পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছেন তিনি।সেই মাহফুজ আলম সোমবার তাঁর নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সরকারের অগ্রাধিকারের কাজের তালিকা। সাথে তাঁদের নিজেদের এখনকার কাজের অগ্রাধিকার। কিন্তু সেই অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পায়নি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা।
সরকারের অগ্রাধিকার হিসাবে ৯টি কাজকে তালিকায় রেখেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এগুলো হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরি, তাদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তাসহ দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন, জুলাই গণহত্যার বিচার, গত ১৬ বছরে গুম-খুন ও আর্থিক লুটপাটের বিচার ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের বিবিধ প্রতিষ্ঠানের বাস্তবসম্মত সংস্কার, শিক্ষা স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ঢেলে সাজানো, তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরি ও উদ্যোগের সমতা নিশ্চিত করা, আগের সরকারের কথিত উন্নয়ন অর্থনীতির বদলে জনগণ, প্রাণ ও পরিবেশের অনুকূল অর্থনীতি গ্রহণ এবং সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সরকার ছাড়াও মাহফুজ আলম তাঁদের এখনকার পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথাও বলেছেন। সেসব কাজ পুরোপুরিই নীতিগত বিষয়। সেখানে শুধু এক জায়গায় তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া তথা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সাপেক্ষে জনগণের রায়ের উপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।প্রভাবশালী এই উপদেষ্টার প্রকাশ করা অগ্রাধিকার এই তালিকায় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কোন কথা নেই। সরকারের কাজের এই অগ্রাধিকার তৈরিতে উপদেষ্টা পরিষদের কোন বৈঠক হয়েছে বলে কারো জানা নেই। অথচ একে সরকারের অগ্রাধিকার বলে লিখেছেন মাহফুজ আলম।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা অনুসারে নির্বাচন হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে। তাঁরই প্রেস সচিব চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের প্রকাশ করা অগ্রাধিকারের কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে নৈতিকভাবে এসব কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের উপর। অন্তর্বর্তী সরকার এসব কাজ বাস্তবায়ন করে যেতে চাইলে তাদেরকে আরো বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে হবে। তাহলে কি ২০২৬ সালের মধ্যেও নির্বাচন আয়োজন হবে না? আরো বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে চাইছে এই অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার? উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টের পর এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গণে।
(ঢাকাটাইমস