Image description

অলিউল্লাহ নোমান

গত পনেরো বছরে গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনী জড়িত ছিল। গুম কমিশন ৭৫৮টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করে এসব বাহিনীর ৩২ কর্মকর্তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। গুম হওয়াদের মধ্যে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, তেজগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুমন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিবির নেতা ওয়ালিউল্লাহ ও মোকাদ্দেসসহ ৪৫০ জন হয়তো আর ফিরবে না বলে ঘুম কমিশন সূত্রে জানা গেছে। ইলিয়াস আলীর পরিণতি সম্পর্কে খবর প্রকাশের পর আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, রাষ্ট্রীয় পাঁচ বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক একাধিক ডিজির নামও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে। গুমের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সুপিরিয়র কমান্ড হিসেবে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকীর মাধ্যমে গুমের নির্দেশনাগুলো দিতেন বলে কমিশনের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ।  ইউনুসের কাছে এ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কীভাবে ঘুম করা হতো, গুমের সঙ্গে কারা জড়িত এবং কীভাবে নির্যাতন করা হতো, তার ভয়াবহ লোমহর্ষক বর্ণনা বিভিন্ন কেস স্টাডিতে তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে আমার। দেশ বলা হয়েছে, শুধু ঘুমই নয়, অপহরণের পর খুন করে লাশও গম করা হয়েছে। লাশ গুম করতে সিমেন্টের বস্তায় লাশ ভরে ফলা হতো প্রধানত বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। এজন্য পোড়গোলাঘাট ও কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করা হতো। জনবিক্ষোভে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীর মাধ্যমে গুমের নির্দেশনা দিতেন। মিশন বাস্তবায়ন করত র‌্যাব, সিটিটিসি, ডিবি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো। ঘুম তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাখিল করা প্রথম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সাদা পোশাকে এক বাহিনী গৃম করত, প্রচার করা হতো অন্য বাহিনীর নাম। এক বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে আসত টার্গেট মানুষটিকে, হস্তান্তর করা হতো অন্য বাহিনীর হাতে। এভাবে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে হাত বদল করা হতো। এম ঘটনা ঘটেছে আলোচিত গুমের শিকার সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আমার আযমী এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে। তারা দুইজনই শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হলেও ৪৫০ জন হয়তো। আর ফিরবে না।

সরকারের কাছে জমা দেওয়া গুম কমিশনের রিপোটে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিএফআইয়ের সাবেক একাধিক কর্মকর্তা তারেক সিদ্দিকীর নির্দেশনার কথা স্বীকার করেছেন। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম ও চিরদিনের জন্য হারিয়ে দেওয়ার নির্দেশনাটি সরাসরি শেখ হাসিনার কাছ থেকেই এসেছিল। শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে বনানীর বাসার কাছাকাছি জায়গা থেকে তুলে নিয়ে গুম করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। গুম কমিশনের প্রথম জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, মোট ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ থেকে ৭৫৮টি অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান করেছে কমিশন। ৭৫৮টি ঘটনার মধ্যে রয়েছে ২০০৯ সালের পাঁচটি, ২০১০ সালের ১৯টি, ২০১১ সালের ২৩, ২০১২ সালের ৩৪, ২০১৩ সালের ৭৩. ২০১৪ সালে ৪৫, ২০১৫ সালে ৭৮, ২০১৬ সালে ১৩০, ২০১৭ সালে ৮৪, ২০১৮ সালে ৮৯, ২০১৯ সালে ৩৬, ২০২০ সালে ১৮, ২০২১ সালে ২৫, ২০২২ সালের ৪২, ২০২৩ সালের ৪৩ এবং ২০২৪ সালের ২১টি ঘটনা পর্যালোচনা করেছে কমিশন। গত ১৫ বছর বিরোধী মতের মানুষকে গুমের সঙ্গে কারা জড়িত, কারা জড়িত, কীভাবে নির্যাতন বা হত্যা করা হতো তার নানা বর্ণনা ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। ৮ গোপন বন্দিশালায় নির্যাতন কমিশনের অনুসন্ধানে ডিজিএফআই, সিটিটিসি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর ৮টি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পেয়েছে। এগুলো আয়নাঘর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অপহরণের পর ভুক্তভোগীদের এসব গোপন বন্দিশালার অন্ধকার কক্ষে রাখা হতো। সেখানে তাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালানো হতো। কমিশনেরর তদন্তে ভুক্তভোগীরা এমন নানা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। কমিশনের তদন্তে উঠে আসে ২০১০ সালে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে র‌্যাব এক যুবককে অপহরণ করে চেতনানাশক ছাড়াই তার ঠোঁট সেলাই করে দেয়। এছাড়া মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে অনেককে। লাশ সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে এমন অনেক লাশ ফেলা হয়েছে। লাশ ফেলার জন্য ঢাকার পোয়গোলাঘাট ও কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করা হতো। নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনায় আরও উল্লেখ করা হয়, যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। প্রতিবেদনে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও মুক্তি এ পাঁচ ভাগে ঘুমের ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে তুলে নিয়ে গুম করার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ৩২ জনকে চিহ্নিত করেছে গন তদন্ত কমিশন। বিভিন্ন বাহিনীর চিহ্নিত ৩২ জনকে বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত রাখার অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়া দেয় কমিশন। এ ৩২ জনের মধ্যে সেনা, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, র‌্যাব , সিটিটিসি, এনএসআই, ডিবি, এসবি, সিআইডি ও পুলিশের সদস্য রয়েছেন। হুম্মাম কাদের চৌধুরীর গুম নিয়ে হাসিনার মন্তব্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর গুমের ঘটনা ও ফিরে আসা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আমান আযমীসহ বেশ কয়েকজনের কেস স্টাডি উল্লেখ রয়েছে গৃম কমিশনের প্রথম প্রতিবেদনে। গৃম কমিশনের প্রথম জমা দেওয়া রিপোর্টে লায়াবিলিটি অব ডিবি, ডিজিএফআই, সিটিটিসি এবং শেখ হাসিনা শিরোনামে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর কেস স্টাডিতে একটি চ্যাপ্টারে উল্লেখ রয়েছে। হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে অপহরণ করেছিল ডিবি। পরবর্তী সময়ে তাকে হয়ান্তর করা হয় ডিজিএফআইয়ের কাছে। সর্বশেষ ডিজিএফআই থেকে হস্তান্তর করা হয় সিটিআইবির কাছে। হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে অপহরণ ও ঘুম করে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকায় ডিবির তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিজিএফআই প্রধান জেনারেল আকবর এবং তৎকালীন সিটিআইবি প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে ঘুম তদন্ত কমিশনের জমা দেওয়া প্রথম প্রতিবেদনে। কমিশনের রিপোটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন জেনারেল আকবর জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তী সময়ে স্বীকার করেছেন, হুম্মাম কাদেরের অপহরণের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অন্তত দুইবার আলোচনা করেছিলেন। এছাড়া তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গেও একবার আলোচনা করেছেন হুম্মাম কাদের প্রসঙ্গে। হুম্মাম কাদেরের পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। তখন শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন, 'আচ্ছা দেখি'। বলেছিলেন, 'এ বিষয়ে কি অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কমিশনের রিপোটে উল্লেখ করা হয়, তাহলে কি হুম্মামাকে ছেড়ে দেওয়ার পুরো এখতিয়ার শেখ হাসিনার ছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল জেনারেল আকবরের কাছে। জবাবে আকবর জানিয়েছেন, এভরিথিং ক্যান হেপেন, ইফ পিএম ওয়ান্টস টু হেপেন' (প্রধানমন্ত্রী যা চাইতেন তাই ঘটত)। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘুমের ঘটনাগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক চিফ অব আমি স্টাফ মেজর জেনারেল শফিউল আবেদীনকে তলব করেছিল কমিশন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কমিশনের সমনের জবাব দিতে সাড়া না দিয়ে জবাবদিহিতা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এ প্রসঙ্গে কমিশনের রিপোর্টে আরও উল্লেন করা হয়, হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে গোপন বন্দিশালা থেকে ছেড়ে দেওয়ার আগে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী তাকে দ্বিতীয় জীবন লাভের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাকে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে হবে। আরও বলা হয়েছিল, দেশ ছাড়তে হবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হলেই কেবল ফিরতে পারবে। একই কথা দ্বিতীয়বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল হুম্মামকে। আযমীর গুমে পাঁচ জেনারেল, পাঁচ ব্রিগেডিয়ার ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ আমান আযমীকে ঘুম এবং অন্তরীণ রাখার দায়ে ডিজিএফআইয়ের পাঁচজন মেজর জেনারেলকে অভিযুক্ত করেছে গুম তদন্ত কমিশন। এছাড়া সিটিআইয়ের পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে দায়ী করা হয়েছে রিপোটে। ডিজিএফআইয়ের পাঁচ জেনারেল হলেন মেজর জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল আবেদীন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল ইসলাম, মেজর জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল হামিদুল হক। তারা সবাই ব্রিগেডিয়ার আযমীকে অন্তরীণ রাখাকালীন ডিজিএফআইয়ের উচ্চপদে চাকরি করেছেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত গোপন বন্দিশালায় তিনি আটক ছিলেন। একই সময়ে সিটিআইবির উচ্চপদে থাকা পাঁচ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকেও দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ এম ডি সারোয়ার হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী। ৬০ শতাংশ গুমের সঙ্গে জড়িত র‌্যাব সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশই র‌্যাবের দ্বারা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে পুলিশের মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত সিটিটিসি। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম)। কথিত জঙ্গি দমনের নামে ২০১৬ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে গঠিত এ ইউনিট অল্পদিনের মধ্যেই মানুষ গম করার দৌড়ে দ্বিতীয় অবস্থানে স্থান করে নেয়। আমেরিকান পরামর্শ ও অর্থায়নে তৈরি হয়েছিল সিটিটিসি। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও ইকুইপমেন্ট দিয়ে সাজানো হয়েছিল এ ইউনিট। আমেরিকান প্রতিনিধিরা এখনো নিয়মিত তদারকি এবং ট্রেনিং দেন এ বাহিনীর সদস্যদের। অথচ মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের কম্পাউন্ডে তৈরি করা সিটিটিসি ভবনের ৭ম তলায় রয়েছে গোপন বন্দিশালা। বন্দিশালার ছোট ছোট রুমে বছরের পর বছর গম করে রাখা হয়েছিল অনেক মানুষকে। এ ইউনিটের একজন অফিসার আমার দেশকে বলেন, আমেরিকানরা এখন বলছে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকার এ বাহিনীকে মিস ইউজ করেছিল। ৫ আগস্ট অভ্যুথান পর্যন্ত অনেকে বন্দি ছিলেন এ গোপন বন্দিশালায়। বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যান্টনমেন্টসংলগ্ন মিরপুরের কচুক্ষেত এলাকায় ডিজিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল আয়নাঘরখ্যাত আরও একটি গোপন বন্দিশালা। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর এ বন্দিশালা থেকেই বের হয়ে এসেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আমান আমনী ও ব্যারিস্টার আরমান। শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, তুলে নিয়ে কাউকে নির্জন বন্দিশালায় আটক রাখা হতো। আবার কাউকে দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় করা হতো হত্যা করে। তাদের লাশটিও ফেরত দেওয়া হতো না পরিবারের কাছে। যাদের লাশ ফেরত দেওয়া হয়নি, তাদের পরিবার জানে না পরিণতি কী হয়েছে। আবদুল্লাহ আমার আযমী ও ব্যারিস্টার আরমান বের হয়ে আসার পর গুমের শিকার অনেকের পরিবারই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাদের যজনরাও ফিরে আসবেন। কিন্তু হতাশা তাদের কাটছে না। ভবিষ্যতেও এ হতাশা কাটার ক্ষীণ সম্ভাবনাও নেই। শেখ হাসিনা ও তারেক সিদ্দিকীর এমন নির্মমতার শিকার হয়েছেন ৪৫০ জনেরও বেশি। ফিরে না পাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও নেই, এমন তালিকায় বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ছাড়াও রয়েছেন, চৌধুরী আলমসহ বিএনপি ও ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকর্মী। র‌্যাব ও সিটিটিসির পর রয়েছে ডিজিএফআই, ডিবি, এনএসআই এবং পুলিশ। কমিশনের তদন্তে উঠে আসা অনেকগুলো কেস স্টাডির মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রদূত জামান, সুখরঞ্জন বালী, বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে ঘুম করে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা। গুমের পর ফেরেনি ২৭ শতাংশ শেখ হাসিনার আমলে গুমের শিকার পরিবারগুলোর ৭৫৮ অভিযোগ পর্যালোচনার পর কমিশন নিশ্চিত হয়েছে ২৭ শতাংশ (অন্তত ২০৪ জন) আর ফিরে আসেনি। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর সদস্যরা মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে গুম গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে অন্তর্বতী সরকার ২৭ আগস্ট বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনসের কাছে আনফোল্ডিং দ্য ট্রপ শিরোনামে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশন আগামী এপ্রিলে আরও একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করবে বলে জানা গেছে।