Image description

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন সহজ করতে আসছে একগুচ্ছ প্রস্তাব। নিকট আত্মীয়ের বলয়কে বড় করা হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগনে-ভাগনি এবং সৎ ভাইবোন। ম্যাচিং জোড়া প্রাপ্তি সহজ করার জন্য রোগী ও তাদের আত্মীয়দের তথ্য নিয়ে করা হচ্ছে জাতীয় তথ্যভান্ডার। যাচাইবাছাইয়ের পর উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সভায় উত্থাপিত হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ এর খসড়া সংশোধনী।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যার কিডনি লাগবে তার আত্মীয়ের সঙ্গে আমার এক আত্মীয়র প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মিলে গেলে এবং আমার বা আমার আত্মীয়র সঙ্গে তার মিললে দুজন কিডনি বিনিময় করতে পারবে। কিন্তু এটা একই সময়ে হতে হবে। দেখা গেল তিনজন দাতা, কিন্তু তিনজনের কারও জেনোটাইপ মেলেনি। সেক্ষেত্রে এই তিনজন দাতার জন্য ডেটাবেজে থাকবে। পরবর্র্র্তীতে তাদের কারও সঙ্গে মিললে সে বিনিময় করতে পারবে। এতে গড়ে প্রায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ ম্যাচিং হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে মরণোত্তর অঙ্গদানে আগ্রহীদের সংখ্যা কমে গেছে। উৎসাহ বাড়াতে মরণোত্তর অঙ্গদানের ঘোষণা দেওয়া ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার। বিষয়গুলো নতুন সংশোধনীতে রাখা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষু, কিডনি এবং অঙ্গ দানকে উৎসাহ দিতে এ বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপন হয় কিডনি। এরপরই আছে চোখ ও লিভার। কিন্তু এসব প্রতিস্থাপনের হার খুবই কম। এক্ষেত্রে বড় বাধা আইন। এবার সেটি সহজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। অঙ্গ বদলাবদলির পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। নিকটআত্মীয় হিসেবে ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগনে-ভাগনি এবং সৎ ভাইবোনকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সেবার মান নিশ্চিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সরকারি হাসপাতালকেও অনুমোদন নিতে হবে। বিশেষ শর্তে নিকটআত্মীয় ছাড়াও দান করা যাবে অঙ্গ। সোয়াপ ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা ভিন্ন দুই গ্রহীতা ও তাদের আত্মীয়দের মধ্যে ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলেই অঙ্গ দেওয়া বা নেওয়া যাবে। অস্ত্রোপচার হতে হবে একই হাসপাতালে একই সময়ে। ম্যাচিং জোড়া প্রাপ্তি সহজ করার জন্য রোগী ও তাদের আত্মীয়দের তথ্য নিয়ে করা হচ্ছে জাতীয় তথ্যভান্ডার।

যাচাইবাছাইয়ের পর উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সভায়ই উত্থাপিত হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ এর খসড়া সংশোধনী। দেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন পাস হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আনা হয় বেশ কিছু সংশোধনী। রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কিডনির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন রোগীরা। এদের মধ্যে বড় একটা অংশের একটি কিংবা দুটো কিডনি বিকল। কিডনি বিকল হওয়া এই রোগীদের বেশির ভাগ বেঁচে আছেন ডায়ালাইসিস নিয়ে। প্রায় ৭০০-এর মতো রোগী অপেক্ষায় আছেন কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। দেশে সবচেয়ে বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনকারী চিকিৎসক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, আইন সহজ হলে অনেক রোগী নতুন জীবন পাবেন। অন্য অনেক দেশে অঙ্গ সংযোজন আইনে এ বিষয়গুলো আছে, আমাদের দেশে ছিল না। নিকট আত্মীয়ের মধ্যে ম্যাচ না করলে আমরা এটা করতে পারতাম না। আইন সংশোধন হলে আমরাও করতে পারব। এর ফলে ব্লাড গ্রুপের জন্য যে গ্রুপটা করতে পারছে না, তারা এখন অটোমেটিক করতে পারবেন।’ স্বাধীনতা পদক পাওয়া এ চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা যদি মৃত ব্যক্তি থেকে কিডনি কিংবা অন্যান্য সলিড অর্গান নিতে পারি তাহলে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সহজ হয়। জীবিত ব্যক্তি থেকে নেওয়ার দরকার পড়ে না। উন্নত বিশ্বে ৬০-৭০ শতাংশ; কোনো কোনো জায়গায় আরও বেশি মৃত ব্যক্তির দান করা অঙ্গ নিয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়।’