Image description

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নিত্যনতুন ইস্যু। অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিশ্চুপ। ফলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তৈরি হচ্ছে সংশয়-উৎকণ্ঠা।

১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডন বৈঠক কতিপয় রাজনৈতিক দল ইতিবাচকভাবে নেয়নি। তারাই বিভিন্ন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠছে।

তাদের অনেকে বলছে, সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়। কেউ বলছে, পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। কেউ বলছে, দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন? নির্বাচন করতে হলে আগে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, ‘নিত্যনতুন ইস্যু যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।’ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার দাবি দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে কি না এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখার জন্য তিনি রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ জানান। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার আড়ালে পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম করে দেওয়া হচ্ছে কি না, এ বিষয়টিও সবাইকে সিরিয়াসলি ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

জানা গেছে, লন্ডনে ইউনূস-তারেকের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। সে বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঐকমত্যের বিষয়টি আরও ক্রোধান্বিত করেছে তাঁদের। তাঁরা চাচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হোক। তাঁরা কিছুতেই চাচ্ছেন না উল্লিখিত সময়ে নির্বাচন হোক। ফলে নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করে চলেছেন তাঁরা। প্রথমে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করলেও পরে ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেশ করে সমস্বরে এ দাবি তোলেন। নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ এনসিপি নেতারা সংস্কার ও বিচারকার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে না বলেও ঘোষণা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পক্ষ থেকে প্রায়ই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করা হচ্ছে।

গত শুক্রবার দেশের এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীসের, কী নির্বাচন হবে? বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এজন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করতে হবে। আর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রশ্নগুলো এসেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার, তারপর নির্বাচন। জানা যায়, লন্ডন বৈঠকের তিন সপ্তাহ পার হলেও ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেওয়ায় এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সিইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের মানুষ প্রচলিত নির্বাচনব্যবস্থায় অভ্যস্ত। তাই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যদি আগামী নির্বাচনের সময় এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটা ধারণা দেওয়া হতো, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হতাম। কিন্তু সেটি এখনো হয়নি। আশা করি তাঁরা খুব শিগগিরই বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।’ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরাসরি ভোটের নির্বাচনে যাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তাঁরাই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন চান। সঠিক সময়ে নির্বাচন হোক এটা তাঁরা চান না।’