
শিশুর ওপর ঝুঁকি উচ্চ বিএমআই শিশুর জন্যও ঝুঁকি বাড়াতে পারে: গর্ভপাত অকাল প্রসব মৃত শিশুর জন্ম বিএমআই যত বেশি, ঝুঁকিও তত বেশি। তাই গর্ভধারণের আগেই ও
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আপনার প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। আপনি গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে যদি আপনার বিএমআই মাত্র এক-দুই পয়েন্টও কমিয়ে আনেন, তাহলে তা জটিলতা কমাতে সাহায্য করবে।
অনেক নারী ও সন্তান ধারণকারী ব্যক্তি যাদের ওজন বেশি, তারা একেবারে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করেন এবং সুস্থ শিশু জন্ম দেন। তবে অতিরিক্ত ওজন গর্ভাবস্থায় নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
উচ্চ বিএমআই ও গর্ভধারণ
বিএমআই (Body Mass Index) হলো আপনার ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় আছে কিনা তা নির্ণয়ের একটি উপায়।
যদিও বিএমআই সবসময় নিখুঁত নয়—এটি শরীরে চর্বি, পেশি ও হাড়ের পার্থক্য বুঝতে পারে না—তবুও এটি ওজন মূল্যায়নের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।
স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের জন্য আদর্শ বিএমআই হলো ১৮.৫ থেকে ২৪.৯।
আপনার বিএমআই যদি এর চেয়ে বেশি হয়, তবে তা স্বাস্থ্যকর মাত্রার দিকে নিয়ে আসলে গর্ভধারণ সহজ হবে এবং জটিলতা কম হবে।
ওজন কমানো সহজ কাজ নয়, অনেকের জন্য এটি কঠিন মনে হতে পারে। তবে নিরাশ হবেন না—আপনার বর্তমান ওজনের মাত্র ৫-১০% কমালেও তা বড় ধরনের স্বাস্থ্য উপকার এনে দিতে পারে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
বিএমআই রেঞ্জ (ওজন অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস)
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিএমআইয়ের স্বাস্থ্যকর সীমা ভিন্ন হতে পারে।
যাদের পারিবারিক পটভূমি দক্ষিণ এশীয়, চীনা, অন্যান্য এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য, কৃষ্ণ আফ্রিকান বা আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান—তাদের ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম বিএমআইতেও বেশি থাকে।
এই জাতিগোষ্ঠীর জন্য:
-
১৮.৫-এর নিচে: কম ওজন
-
১৮.৫ থেকে ২৩: স্বাস্থ্যকর
-
২৩-এর বেশি: অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি
-
২৭.৫-এর বেশি: উচ্চ ঝুঁকি (স্থূলতা)
সাদা বর্ণের ব্যক্তিদের জন্য:
-
১৮.৫-এর নিচে: কম ওজন
-
১৮.৫ থেকে ২৪.৯: স্বাস্থ্যকর
-
২৫ থেকে ২৯.৯: অতিরিক্ত ওজন
-
৩০ বা তার বেশি: স্থূল
পুরুষদের ক্ষেত্রে ওজন ও প্রজনন
পুরুষরাও যদি তাদের বিএমআই স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখতে পারেন, তবে তাদের সঙ্গী গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। কারণ স্বাস্থ্যকর ওজন মানেই ভালো মানের শুক্রাণু।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ বিএমআই
যদিও অধিকাংশ নারী উচ্চ বিএমআই নিয়েও সুস্থ গর্ভাবস্থা পার করেন, তবে অতিরিক্ত ওজন (বিএমআই ২৫+) থাকলে কিছু ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন:
-
থ্রোম্বোসিস (রক্তে জমাট বাঁধা)
-
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া
এছাড়াও, আপনাকে হয়তো ইন্দাকশন বা সিজারিয়ান করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
শিশুর ওপর ঝুঁকি
উচ্চ বিএমআই শিশুর জন্যও ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
-
গর্ভপাত
-
অকাল প্রসব
-
মৃত শিশুর জন্ম
বিএমআই যত বেশি, ঝুঁকিও তত বেশি। তাই গর্ভধারণের আগেই ওজন কমানো সবচেয়ে ভালো উপায়।
গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা ঠিক নয়, কারণ এতে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি কমে যেতে পারে।
যদি গর্ভধারণের সময় আপনার বিএমআই ৩০-এর বেশি হয়
-
আপনাকে বাড়তি গর্ভকালীন চেকআপ করতে হতে পারে
-
কিছু জন্মপদ্ধতি (যেমন হোম বার্থ) নিরুৎসাহিত করা হতে পারে
-
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই—সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করে আপনি ভালোভাবেই গর্ভাবস্থা পার করতে পারেন।
অতিরিক্ত ওজনের কারণ
ওজন বেশি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে:
-
উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার (ফাস্ট ফুড ইত্যাদি)
-
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
-
বড় বড় খাবারের পরিমাণ
-
ব্যায়ামের অভাব
-
জেনেটিক্স
-
স্বাস্থ্যকর খাবারে অপ্রাপ্তি
চিকিৎসাজনিত ওজন বৃদ্ধি
কিছু রোগ ও ওষুধ ওজন বাড়াতে পারে এবং গর্ভধারণেও সমস্যা করতে পারে। যেমন:
-
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)
-
থাইরয়েডের সমস্যা
-
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এমন কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আবেগ থেকে অতিরিক্ত খাওয়া
অনেকেই মানসিক চাপ বা আবেগ সামলাতে খাবারের আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে সহায়তা দরকার হলে আপনার জিপির (চিকিৎসক) সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজন হলে কাউন্সেলরের সহায়তাও নিতে পারেন।
UK Charity Beat এ বিষয়ে আরও তথ্য দেয়।
ওজন কমানোর পরামর্শ
-
স্বাস্থ্যকর ও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাবার খান
-
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন—সপ্তাহে ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার ইত্যাদি করুন
-
ধীরে খান এবং খাওয়ার সময় সচেতন থাকুন
-
দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়িয়ে চলুন
-
NHS Couch to 5k বা Active 10 অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন
-
বাজার করার সময় NHS Food Scanner অ্যাপ ব্যবহার করুন
-
বাস্তবসম্মত লক্ষ্য ঠিক করুন, যেমন: “আমার বিএমআই ২ পয়েন্ট কমাবো”
-
খিদে পেলে পানি পান করুন—এতে পরিপূর্ণতা অনুভব হবে
মানসিক স্বাস্থ্য ও ওজন
কিছু ওষুধ (বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য, যেমন স্কিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার) ওজন বাড়াতে পারে।
এসব ওষুধ ক্ষুধা বাড়ায় ও ক্লান্ত করে তোলে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য তাই ভালো খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা অত্যন্ত জরুরি।
নিজের থেকে কখনোই ওষুধ বন্ধ করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হঠাৎ ডায়েট বা অতিরিক্ত ব্যায়াম নয়
-
ক্র্যাশ ডায়েট বা একবারে অতিরিক্ত শরীরচর্চা দীর্ঘস্থায়ী ফল দেয় না
-
ধীরে ধীরে ওজন কমান
-
একটি ভালো ডায়েট পরিকল্পনায় থাকবে:
-
স্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিমাণ নিয়ে শিক্ষা
-
অত্যধিক কঠোরতা নয়
-
টেকসই ওজন হ্রাস কৌশল
-
আপনার চিকিৎসক স্থানীয় ওজন নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের তথ্য দিতে পারবেন।