Image description

১৮ জুলাই ২০২৪। উত্তরা আজিমপুরের উত্তাল রাজপথ। কোটা সংস্কার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও রাস্তায়। সেই ভিড়ে ছিলেন আশাদুল্লাহ (২৩)—পেশায় একজন লেগুনা চালক।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের বালিয়াচন্দি গ্রামের এই তরুণ শহরে দিনভর লেগুনা চালিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাইতেন। সংসারের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। সামান্য আয়ে চালাতেন পুরো সংসার। পরিবারে তখন অপেক্ষা করছিল এক নতুন অতিথি—স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, আসন্ন সন্তান নিয়ে ছিল নতুন স্বপ্ন, নতুন জীবনের পরিকল্পনা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল পুলিশের গুলিতে।

সেদিন উত্তরা আজিমপুরে ছাত্রদের এক মিছিলে যোগ দেন আশাদুল্লাহ। তিনি নেতা ছিলেন না, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও ছিলেন না। শুধুই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে।

মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঝরে পড়ে তার প্রাণ। বুকের ভেতর যেসব স্বপ্ন ছিল—ঘর তোলার, সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর—সব থেমে যায় এক নিমিষে। মৃত্যুর তিন মাস পর জন্ম নেয় কন্যা আখি। বাবার মুখ দেখার আগেই সে হয়ে যায় অনাথ। এখন নানাবাড়ির কোলে কাটছে তার শৈশব।

আশাদুল্লাহর বাবা মো. জৈনদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে সারাদিন গাড়ি চালাইতো, কষ্ট করতো। কোনোদিন কারো ক্ষতি করে নাই। আন্দোলনে গেছিলো দেশের ভালো চাইতে, ফিরল লাশ হয়ে। ন্যায়ের জন্য যারা যায়, তারা কি এভাবেই মরবে?’

মা রাশেদা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন, ‘একটা ছেলে আছিলো, ঘর ভরা স্বপ্ন আছিল। সেই স্বপ্ন এখন লাশ হয়ে পড়ে আছে কবরে। নাতনির মুখে বাবার ডাক শোনারও সুযোগ হইল না।’

আশাদুল্লাহর পরিবার জানায়, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে কিছু সাহায্য পেলেও, আশাদুল্লাহর স্ত্রী সব অর্থ নিয়ে চলে গেছেন। পরিবার পেয়েছে কেবল ২৫ হাজার টাকা, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের হাত থেকে। ছেলের রক্ত দিলাম, বিচার তো দূরের কথা, এখন তো সাহায্যও পাই না। কই গিয়া কাঁদি আমরা?

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।