
প্রবাসে ছোট ছেলের মৃত্যুর কষ্টে যখন স্তব্ধ পুরো পরিবার, তখন শোক হয়ে এলো বড় ছেলের মৃত্যু। মর্মান্তিক এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর তালুকদার পাড়া এলাকার বৃদ্ধ ফুল মিয়ার পরিবারে। সৌদি আরবে নিহত ছোট ছেলের মরদেহ আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় বড় ছেলেসহ দুজনের। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। জীবনের পড়ন্ত বেলায় দুই সন্তানের মৃত্যুশোকে বৃদ্ধ ফুল মিয়া আর তার স্ত্রীর বুক ভাঙা হাহাকার।
অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় গত বছরের জুনে সৌদি আরবে যান ফটিকছড়ির ভূজপুর তালুকদারপাড়ার ফুল মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়ার (২৬)। কিন্তু দেড়মাসের মাথায় ক্ষুধার জ্বালায় খাবার খেতে গিয়ে মালিকের নির্যাতনে মারা যান এই তরুণ।
প্রায় একবছর নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে দেশে আনার পর শনিবার ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে ফিরছিলেন রুবেলের বড় ভাই বাবুল, মামাতো ভাই ওসমান ও চাচা বশীর। কিন্তু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আসার পর দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা যান বাবুল মিয়া (২৮) ও ওসমান গনি (৩১)। আহত হন বশীর।
এ দুর্ঘটনায় আহত বশীর মিয়া জানান, দুর্ঘটনার পর আমার ভাতিজা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার নিশ্বাস আসছে আর যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের সিট থেকে বার বার পরে যাচ্ছিল হেলপার আর আমি তাকে ধরে রাখছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চোখের সামনেই ভাতিজাটা ছটফট করতে করতে মারা গেলো।
দুর্ঘটনায় নিহত বাবুলের আড়াই বছর আর দশ মাস বয়সী দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামী হারিয়ে ছোট্ট এই দুই সন্তান নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তায় তার স্ত্রী।
শোকে স্তব্ধ ওসমানের পরিবারও। সংসারের বড় অবলম্বন হারিয়ে শোকাতুর স্বজনরা দিশেহারা, ওসমানের ছোট তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায়।
এই তিনজনের জন্য কাঁদছে তালুকদারপাড়ার মানুষজনও। তাদের অভিযোগ, বিদেশে নির্যাতন করে কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানোর পেছনে সক্রিয় একটি চক্র।
ধারদেনার চার লাখ টাকা দিয়ে রুবেলকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিল পরিবার। শোকের সঙ্গে পরিবারটির সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই দেনার চিন্তাও।
প্রসঙ্গত, চৌদ্দগ্রামে সৌদি প্রবাসী রুবেল মিয়ার (২৬) লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে প্রবাসীর ভাইসহ দুজন নিহত হন। শনিবার (৫ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিশা নামক স্থানে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। রুবেল মিয়া সৌদিতে মারা যান। ঢাকা থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রামের ভূজপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথে বিকেল ৫টায় মহাসড়কের বাতিসা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি একটি লরির পেছনে ধাক্কা দিলে সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে প্রবাসীর ভাই চট্টগ্রামের ভূজপুর থানার বাবুল মিয়া এবং সজন ওসমান গনি মারা যান।