Image description

ফিলিস্তিনের গাজ্জায় গণহত্যা এবং পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আমিরাত গঠন করতে চাওয়া ৫ শেখের উদ্ভব ঘটেছে, যাদের চিনে না কেউ।

রবিবার (৬ জুলাই) মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজ্জায় গণহত্যা এবং পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে হেবরনে আমিরাত গঠন করতে চাওয়া ৫ শেখের উদ্ভব ঘটেছে। এই ৫ শেখ ইসরাইলের অর্থ মন্ত্রী নির বারকাতের কাছে একটি নতুন আমিরাত গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা হেবরনে প্রতিষ্ঠিত হবে, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিবে এবং পশ্চিম তীরের সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকবে বা নিজস্ব সরকার নিয়ে গঠিত হবে।

ওয়াল স্ট্রিটে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হেবরন সহ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা ওই ৫ শেখের চিঠি ও প্রস্তাবনার কঠোর সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছে। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হেবরনের কেউই ওই ৫ শেখের কাউকে চিনে না। না কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, না কোনো স্থানীয় লোক।

মার্কিন মিডিয়া মারফত উদ্ভব ঘটা ওই ৫ শেখের চিঠিতে একটি ইসরাইলী-পশ্চিম তীর শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে হামাস ও এই ধরণের ইসরাইল বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে এই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয় যে, ফিলিস্তিনি শ্রমিকরা সন্ত্রাসবাদ সহ্য করবে না।

তাদের হেবরন আমিরাতের সরকার কেনো গুরুত্বপূর্ণ এটি বুঝাতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়, ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এমন একটি পদক্ষেপ যা পশ্চিম তীরের সরকার (পিএ) কখনো নেয়নি। বরং দশকের পর দশক একে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিটের দাবী অনুযায়ী, চিঠি পাঠিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন ওয়াদি আল-জাবারি নামের এক হেবরনী শেখ, প্রস্তাবনায় যার সাথে অঞ্চলটির কথিত আরো ৪ শেখ যুক্ত ছিলেন।

হেবরনের স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বদের কেউই তাদের চেনেন না বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এমনকি জাবারিকে যেখানকার বাসিন্দা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানকার লোকজন বা তার দূর পরিবারের সদস্যরাও প্রস্তাবনা চিঠির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এই প্রস্তাবের লেখকরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন না।

হেবরনের এক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক ঈসা আমরো বলেন, এই প্রস্তাবনা এবং যারা এটি বানিয়েছে, পুরোই বানোয়াট।

তিনি মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, ওয়াশিংটন স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে উল্লেখ করা তথাকথিত হেবরনের শেখরা সম্পূর্ণরূপে মনগড়া। এরা এমন কিছু ব্যক্তি যাদের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক মর্যাদা ও পারিবারিক সংযোগ বা সম্প্রদায়গত স্বীকৃতি নেই। কোনো গণমাধ্যম, কোনো গোত্র বা কোনো ফিলিস্তিনি দলই তাদের চেনে না। তারা বাস্তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও নয়।

ওয়াশিংটন স্ট্রিট জার্নালের সমালোচনা করে বলেন, এটি সাংবাদিকতা নয়। তারা কৃত্রিম ও মনগড়া বর্ণনায় হেবরনের নেতা তৈরির অপচেষ্টা করছেন। অথচ প্রকৃত হেবরনের মানুষরা দখলদারিত্ব ও ইসরাইলী নৃশংসতা সহ্য করে চলেছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও প্রতিবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, হেবরনে এই চিঠির লেখকদের কোনো অস্তিত্ব নেই। বাস্তব প্রভাব নেই। জাবারি প্রকৃতপক্ষে জেরুসালেমে থাকেন।

জাবারির পরিবারের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তার পরিবার পরিকল্পনাটির বিরোধিতা করে বলে, এটি কোনভাবেই আমাদের ইচ্ছার ও সম্মানিত পরিবারের অবস্থানের প্রতিফলন ঘটায় না। বরং জাবারি পরিবার এখনও ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর অংশ হিসেবে ন্যায়সংগতভাবে স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা দখলদারিত্বকে স্বাভাবিকীকরণ বা তা বৈধতা দেওয়ার সব প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করি।

তার পরিবার আরো জানায় যে, জাবারি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থে ইহুদিবাদী অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সাথে ও ইসরাইলী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক রেখে চলে। এর জন্য সে বাজেভাবে পরিচিত। তার উদ্যোগের পারিবারিক ও সামাজিক কোনো জনসমর্থনও নেই।

হেবরনের সাংবাদিক আমারো এক এক্স বার্তায় উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন স্ট্রিট জার্নালের এই প্রতিবেদনে কোনো যাচাইযোগ্য সূত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকেও উপেক্ষা করেছে। এটি তাদের ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার। হেবরন যখন উগ্র ইহুদিবাদীদের অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে সামরিক অবরোধ পর্যন্ত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন তাদের এই কল্পিত বর্ণনা পাঠক ও ফিলিস্তিনিদের জন্য গভীর ক্ষতি বয়ে আনছে।