Image description
♦ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নেওয়া মোট ঋণ ৮ লাখ কোটি টাকা ♦ মোট ঋণের ৪২ শতাংশ দিয়েছে সরকার ♦ সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার ♦ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঝুঁকি বাড়বে আর্থিক খাতে আশঙ্কা অর্থ বিভাগের

কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা দেশের মোট জিডিপির ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ, বা প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গেছে সরকারি তহবিল থেকে; বাকি ৫৮ শতাংশ ঋণ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু সরকারি তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে তাই নয়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঋণ নিয়েছে, তার বিপরীতেও লাখ কোটি টাকার বেশি সার্বভৌম গ্যারান্টি দিতে হয়েছে সরকারকে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারকে প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার সার্বভৌম গ্যারান্টি দিতে হয়েছে। আগের অর্থবছরে সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ বলছে, এসব গ্যারান্টি মূলত বেসামরিক বিমান পরিবহন, বিদ্যুৎ খাত, সার কারখানা এবং সরকারি পণ্য খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত ঋণের কারণে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বাড়ছে তাই নয়, সরকারের আর্থিক খাতেও ঝুঁকি বাড়ছে বলে খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়ের একটি বড় অংশ হচ্ছে সরকার থেকে বিনিয়োগকৃত ঋণ বা মূলধন। যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা পরিচালনায় ব্যর্থ হয় বা মূলধন হারায়, তাহলে সরকার আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বে। সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে নীতি বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার যদি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং তারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারকে তা পরিশোধ করতে হবে। এটি আর্থিক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করতে না পারলেও সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু সরকার মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর অনাদায়ী ঋণ ৯ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)’ অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর অনাদায়ী ঋণ ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর অনাদায়ী ঋণ ৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন করপোরেশন (বিপিডিবি)-এর অনাদায়ী ঋণ ৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিসি) অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও দেখা যাচ্ছে। এসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কারও কারও পরামর্শ আছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পৃথক পৃথক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। অর্থ বিভাগের সাবেক এই সিনিয়র সচিব বলেন, সুগার মিল বা বিজেএমসির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো আর কখনোই লাভজনক করা সম্ভব হবে না। এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার বিসিআইসি, টিসিবি, বিপিসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে লাভজনক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তা না করে শুধু ঋণ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নীতি অব্যাহত রাখলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়বে বলে জানান তিনি।