Image description

চব্বিশের জুলাই। গত বছরের জুলাইয়ের দিনগুলোয় রোদে পুড়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন লাখো তরুণ। তাদের শুধু চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ছিল না, বরং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক সর্বজনীন ছাত্র অভ্যুত্থানের অংশ হন তারা। সেই আন্দোলন শুধু শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তন করেনি, বরং একটি প্রজন্মের চেতনা ও প্রতিবাদের ধারাকে নতুন রূপ দিয়েছে।

জুলাইয়ের সেই আঁচ এক বছরেও নেভেনি। বরং তা মাঝে মাঝেই প্রজ্বালিত হয়ে উঠেছে নানা উদ্যোগে, নানা প্ল্যাটফর্মে। আর সেই আঁচকে জাগিয়ে রাখতেই আন্দোলনের স্মৃতি, শহীদদের নাম, প্রতিরোধের পোস্টার, স্লোগান, এবং দিনপঞ্জিকাগুলো সংরক্ষণ করে বারবার সবার সামনে তুলে ধরছে স্যোশাল মিডিয়ার অন্তত ১০টি প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক ও অনলাইন মাধ্যমে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে আন্দোলনের স্পিরিট।

প্ল্যাটফর্ম সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি পাতা নয়, বরং চলমান প্রতিবাদের প্রতীক। উল্লেখযোগ্য এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম হলো- টেলস অফ জুলাই, দ্যা রেড জুলাই, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স, জুলাই রেকর্ডস, জুলাই গ্রাফিতি, রক্তিম জুলাই, জুলাই অন রেকর্ড, জুলাই স্টোরি, রিলায়েবল টেলস, জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভ ইত্যাদি।

জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স পেজের অ্যাডমিন সালে মাহমুদ রায়হান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা পেজটি শুরু করি ১ সেপ্টেম্বর থেকে। আমাদের এ পেজ খোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাইয়ের আন্দোলন স্মৃতি সংরক্ষণ ও শহীদদের সঠিক তথ্য পৌঁছে সবার কাছে কাছে দেয়া। আমরা বর্তমানে একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছি। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটি আছে। ১২টা জেলায় কমিটি রয়েছে। আর্থিক অনুদানের বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের।’ 

জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স পেইজের এডমিন সালে মাহমুদ রায়হান

রক্তিম জুলাই পেজের অ্যাডমিন এমদাদ বাবু বলেন, ‘পেজটি আমরা আন্দোলনের শেষে আগস্টে খুলেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আন্দোলনে আহতের চিকিৎসার সংক্রান্ত বিষয়ে। সে লক্ষ্য নিয়েই পেজ খোলা হয়েছিল। রাষ্ট্রের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরাও আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। পেজের সবাই আন্দোলনের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিল। বর্তমানে আমাদের পেজে তেমন একটা কার্যক্রম নেই।’

 রিলায়েবল টেলস নামক প্লাটফর্মের টিম মেম্বার আব্দুল্লাহ আল মামুন

রিলায়েবল টেলস নামের ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাই আন্দোলনের শহীদের নিয়ে কাজ করা। আমাদের পেজটি আমরা আন্দোলন পরবর্তীতে শুরু করেছিলাম। আমরা এখন পর্যন্ত ৩২৪ জন শহীদের পরিবারকে নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অনুদান আমরা পাইনি। তবে সম্প্রতি সরকার থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জুলাই ডকুমেন্টারির একটি কাজে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’

আরো পড়ুন: ‘স্বৈরাচার হাসিনা আমার সুখের সংসারটা তছনছ করে দিছে—আমি তার ফাঁসি চাই’

রক্তিম জুলাই পেইজের এডমিন এমদাদ বাবু

টেলস অফ জুলাই প্লাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র দ্য ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের এ প্লাটফর্মের জন্ম স্বৈরাচারের আমলে, ভয়ার্ত উত্তাল সময়ে। চব্বিশের জুলাই মাসের ৩১ তারিখ। সাহিত্য সংকলন গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ থেকে এ যাত্রা শুরু। ১২ সদস্যবিশিষ্ট এক্সিকিউটিভ কমিটি আছে, যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। জুলাইয়ের প্রথম প্লাটফর্ম হওয়া সত্ত্বেও আমরা সরকার বা কারো সুনজর পাইনি যে, আমাদের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাব, আরো গুছিয়ে নিবো। তবে আমরা থামবো না, আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং সামর্থ্যে আমরা জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যাবো। জুলাইকে হারাতে দিবো না। 

টেলস অফ জুলাই প্লাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র

প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু ঘটনাপ্রবাহ সংরক্ষণই নয়, বরং জুলাই চেতনার উত্তরাধিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেও কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই তারা প্রকাশ করছে আন্দোলনের দলিল, সংগঠকদের সাক্ষাৎকার, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও নতুন গবেষণালব্ধ তথ্য। এ প্রয়াসগুলো জুলাই অভ্যুত্থানকে শুধু একটি আন্দোলন হিসেবে নয়, বরং একটি প্রজন্মের সামাজিক বিবেকের জাগরণ হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করছে।