Image description

আগামী ৯ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুদেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও এ বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় শুল্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনায় আপাতত অগ্রগতি না হলেও দর কষাকষির আলোচনা আরও চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে  (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) ওয়াশিংটনে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। আগামী ৮ জুলাই বাণিজ্য উপদেষ্টার ফের বৈঠকে বসবেন ইউএসটিআরের সঙ্গে। ওই বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে যাত্রা করবেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। সফরকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গেও শুল্ক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ট্রাম্পের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাব্য পথ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তাব দেয়, যাতে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ মনে করে, এসব শর্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে ঢাকা এখন প্রচলিত বিশ্ববাণিজ্যের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পারস্পরিক সুবিধাজনক একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়। এ জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাবিত খসড়ার ওপর তিন দফা মতামত পাঠিয়েছে এবং দুই পক্ষের মধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শর্তের কারণে এখনো চূড়ান্ত হয়নি  চুক্তির রূপরেখা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকও শেষ হয়েছে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই।

সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত দিয়েছে, তারা যদি অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, বাংলাদেশকেও তাতে সঙ্গ দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার এই শর্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে।

শর্তাবলির মথ্যে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ছাড় দেবে, সেসব পণ্যে অন্য কোনো দেশকে যেন একই সুবিধা না দেওয়া হয়।  বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘সর্বাধিক অনুকূল রাষ্টনীতির পরিপন্থি’ বিবেচনায় এটিকে অ গ্রহণযোগ্য বলছে বাংলাদেশ। 

মূলত এসব কঠিন শর্তের কারণে অন্যান্য দেশও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে এগোতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে রাজি থাকা ইন্দোনেশিয়াও পরে কঠিন শর্ত মেনে চুক্তিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার সামাজিক মাধ্যমে জানান, ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, আর ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববাজারে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর আওতায় বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। তবে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জুলাই। 

শীর্ষনিউজ