Image description

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের ঐক্যে ফাটল এখন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিভাজন, আধিপত্য বিস্তার এবং দখল-বাণিজ্যের অভিযোগ সামনে এসেছে।

সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা এখন দুটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নুরুল ইসলাম ও মোজাহিদুল ইসলাম, তারা বিএনপি-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বাদিউল কবীর ও নিজাম উদ্দিন। এরা জামায়াত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই দুই গ্রুপ শুরুতে সম্মিলিতভাবে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত ছিল।

চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি অধ্যাদেশ সংশোধনের প্রস্তাব দিলেও আন্দোলনকারীরা পুরো অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অনড় থাকে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের কারণে সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতরে শৃঙ্খলা, কার্যক্রম ও নাগরিকসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয়ের ক্যান্টিনে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নুরুল ইসলামসহ পাঁচ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আরও ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওবায়দুল ইসলাম রবি, আইন মন্ত্রণালয়ের মিলন, অফিস সহকারী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও হাসনাত।

সূত্র জানায়, হামলার জেরে ২৯ জুন সচিবালয়ে ‘নুরুল-মোজাহিদ’ অংশের মহাসচিব মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন কর্মচারী বিক্ষোভ করেন। তারা পরিষদের অপর অংশের সভাপতি বাদিউল কবীরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন।

এই গ্রুপের অভিযোগ, ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় নুরুল ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। নুরুল ইসলাম আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের সব সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল—ফলে হামলার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন তারা। এই গ্রুপের অন্যতম নেতা মিলন মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হামলাকারীদের ডাকা কোনও আন্দোলনে অংশ নেওয়া হবে না এবং তাদের প্রতিহত করা হবে।’

এ ঘটনার পর থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আন্দোলন শিথিল হয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’-কে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে অধ্যাদেশটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি এখনও অব্যাহত রেখেছেন।

অপরদিকে বাদিউল গ্রুপের নেতা নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, সচিবালয়ে ‘হাতুড়ি লীগ’ নামে নতুন এক শক্তির উত্থান ঘটেছে, তারা তালা ভেঙে ক্যান্টিন দখল করেছে। তার অভিযোগ, মোজাহিদুল ইসলামের ছেলে তোজাম্মেল হোসেন তানজিম একজন ছাত্রলীগ নেতা, তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা চালিয়েছিলেন। অথচ এখন তার পরিবার নির্যাতিত বলে দাবি করছেন।

নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে সচিবালয়ের ‘বহুমুখী সমবায় সমিতি’ সুরক্ষিত থাকবে কীভাবে?’ তিনি অভিযোগ করেন, নুরুল ইসলাম ও মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের একটি গ্রুপ বিএনপি পরিচয়ে সচিবালয়ের ক্যান্টিন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মাশরুমের দোকান, চাল-আটা বিক্রির দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল করে বসে আছে। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো ভিডিও বার্তায় নিজাম উদ্দিন জানান, তারা বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতিকে ‘দখলমুক্ত’ করেছেন। ভিডিওতে পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর, মহাসচিব নিজাম উদ্দিন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রহমতুল্লাহকে (বাবু) ‘দখল মুক্তির অভিযানে’ অংশ নিতে দেখা যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে বিতর্কিত করছে, তারা আসলে কারা?’

অপরদিকে, নুরুল ইসলাম গ্রুপের নেতা সোহরাব হোসেন জানান, ৩ জুন তারা বহুমুখী সমবায় সমিতির নতুন কমিটির অনুমোদন পান এবং আগের কমিটির সেক্রেটারির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু এ নিয়ে বাদিউল কবীর বেলাল, মিজানুর রহমান সুমন, আরিফ হোসেন ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় নুরুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা আহত হন।

সোহরাব আরও বলেন, ‘যারা হামলা চালিয়েছেন তারা কমিটির কেউ না। বরং এরা সচিবালয়ে আওয়ামীপন্থিদের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে কাজ করছে।’

জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদেরই একটি অংশ এখন ক্যান্টিন ও সমবায় সমিতির দফতর দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কাজে তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করছে।’