Image description
মাদক বেচাকেনার ভয়ংকর পদ্ধতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয়েছে মাদক বেচাকেনার ভয়ংকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক বেচাকেনা হলেও অর্থ লেনদেন হয় তৃতীয় কোনো দেশে। মূলত বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা সাগরপথে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে পাড়ি দেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘিরেই সচল পদ্ধতি। যার মাধ্যমে মাদক মাফিয়া ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রধান অর্থায়নের উৎসে পরিণত হয়েছে। ফলে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য পাঠানো টাকা রোহিঙ্গাদের অজান্তেই জ্বালানি জোগাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা থেকে শুরু করে ক্যাম্পভিত্তিক ত্রাস সৃষ্টিকারী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

সীমান্ত এলাকা মাদক ব্যবসা নিয়ে গবেষণাকারী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল (উত্তর ও দক্ষিণ) উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক বেচাকেনা হলেও মাদকের টাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রহণ করা হয় এমন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। তথ্য পেয়ে এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছি। এ বিষয়ে কাজ শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারব।’

মাদক কারবারিদের নতুন এ পদ্ধতি নিয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইন প্রয়োগকারীর সংস্থাগুলোর অতি তৎপরতার কারণে মাদক মাফিয়াদের কেউ কেউ এখন দেশে মাদকের বিক্রির টাকা গ্রহণ করে না। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক বিক্রি করলেও অর্থ গ্রহণ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে। এক্ষেত্রে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ডেলিভারি দেয় কিন্তু অর্থ গ্রহণ করে বাইরে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হুন্ডি চেইন শক্তিশালী হওয়ায় হুন্ডিকে ব্যবহার করেই তারা লেনদেন করে থাকে। এ হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্যরা মূলত বিগত সময়ের চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসার পদ্ধতি অনুসরণ করেই মাদকের টাকা পরিশোধ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এ ছাড়া সাগর পথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আরও কয়েকটা দেশে পাড়ি জমিয়েছে লাখো রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা অন্য দেশে পাড়ি দিলেও বাংলাদেশের ৩৪ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে এখনো অবস্থান করছে কারও মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান কিংবা নিকটাত্মীয়। বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের পারিবারিক ব্যয়নির্বাহ করতে প্রতি মাসে তারা পাঠায় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু তাদের এদেশে কোনো বৈধ ব্যাংক হিসাব না থাকায় হুন্ডিই তাদের পরিণত হয়েছে একমাত্র ভরসা হিসেবে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই রমরমা হয়ে উঠেছে হুন্ডি ‘বাণিজ্য’।

হুন্ডির এ জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই অভিনব পদ্ধতি চালু করেছে কিছু কিছু মাদক মাফিয়া। তারা ইয়াবা, আইস ও অন্যান্য মাদক বেচাকেনার অর্থ গ্রহণের জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালেশিয়ায়, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তৈরি করেছে হুন্ডি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের বিদেশি সদস্যরা প্রবাসী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থই পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে মেটানো হয় মাদক বেচাকেনার পাওনা। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অর্থের প্রধান জোগানদাতাও এ হুন্ডি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাইফ উদ্দিন শাহীন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয় এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হুন্ডি সিন্ডিকেটের তৎপরতা থামাতে আমরা কাজ করছি।

এ বিষয়ে কথা হয় রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা আনিস মোস্তাফার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বৈধ পথে বিদেশ থেকে টাকা আনার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। তাদের বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় এবং জটিল পদ্ধতির কারণে তারা হুন্ডির ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়।

দেশের বাইরে থাকা স্বজনরা বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে না পেরে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। এ সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধী চক্রগুলো। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলে করে ক্যাম্পে আসেন হুন্ডির লোকজন। টাকা বিলি করার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা চলে যান।’