
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাড়ে পাঁচ হাজার বন্দী রয়েছেন। এঁদের মধ্যে হাজতিদের (যাঁদের মামলা বিচারাধীন) গায়ে থাকে সাধারণ পোশাক। আর কয়েদিদের (যাঁদের সাজা হয়েছে) পরনে থাকে বিশেষ পোশাক—সাদার ওপর ডোরাকাটা জামা, মাথায় সাদা টুপি। কিন্তু বন্দীদের মধ্যে পাঁচজন আলাদা। তাঁদের মাথায় সাদা নয়, আছে লাল টুপি। ওই পাঁচজন হলেন ফরহাদ হোসেন, মো. এমরান, ইকবাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও মো. আনোয়ার হোসেন।
কারাবিধি অনুযায়ী, যেসব বন্দী পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়েন, তাঁদের মাথায় ‘লাল টুপি’ পরানো হয়। কারা সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৬ মার্চ ভোর সোয়া পাঁচটায় তৎকালীন কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন কর্ণফুলী ভবনের বিশেষ ওয়ার্ডের (দুর্ধর্ষ বন্দীদের ওয়ার্ড) তালা খোলার পর কৌশলে পালিয়ে যান বন্দী ফরহাদ হোসেন। ওই দিন ট্রেনে প্রথমে ঢাকা, পরে নরসিংদীতে ফুফুর বাড়িতে চলে যান। ৯ মার্চ ভোরে নরসিংদী জেলায় ফুফুর বাড়ি থেকে জেলপালানো ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আসার দিন থেকে ফরহাদের মাথায় ওঠে লাল টুপি। পরে এই মামলায় ফরহাদের এক বছরের সাজা হয়।
২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সদরঘাট থানার এসআরবি রেলগেট এলাকায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর বুকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে কালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। ওই ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি কারাগারে আসেন ফরহাদ। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
চট্টগ্রাম কারাগার থেকে হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতে পুলিশের হেফাজত থেকে গত ২৯ এপ্রিল এপ্রিল পালিয়ে যান লোহাগাড়া থানার হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেন ও সীতাকুণ্ড থানার মাদক মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন। অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পালানোর ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন। পালানোর সপ্তাহখানেক পর দুজনই গত ৭ মে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এলে তাঁদেরও পরানো হয় লাল টুপি।
১ মে ভোরে নগরের বাকলিয়া থানার সেকান্দর চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. এমরানকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে গত বছরের ২ আগস্ট রাহাত্তারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী সুজানা আক্তারকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। সেদিন বিকেলে অন্য আসামিদের সঙ্গে এমরানকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু নিচতলায় কারাধ্যক্ষ কার্যালয়ের পাশে থাকা শৌচাগারের জানালা ভেঙে তিনি বেরিয়ে পড়েন। পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে আবার নিচে নেমে মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান। ওই দিন রাতে বাড়ি থেকে আটক করে কারাগারে নিয়ে আসা হয় এমরানকে। পরানো হয় লাল টুপি।
খাগড়াছড়ি জেলা কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে পালিয়ে যান হত্যা মামলার আসামি মো. আনোয়ার হোসেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে প্রথমে খাগড়াছড়ি কারাগারে সেলে রাখা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় রাঙামাটি কারাগারে। রাঙামাটি কারাগার থেকে গত মে মাসের শেষের দিকে আনোয়ার আসেন চট্টগ্রাম কারাগারে। কারাগারে আসার দিন থেকে তাঁর মাথায়ও ওঠে লাল টুপি।
কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দীরা জানান, শত শত বন্দীর মধ্যে লাল টুপির পাঁচ বন্দীকে আলাদা করে চেনা যায় তাঁদের টুপির কারণে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী, কারাগার থেকে পালানোর কারণে পাঁচ বন্দীকে ‘লাল টুপি’ পরানো হয়েছে। তাঁদের কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে, যাতে আর কারাগার থেকে পালাতে না পারেন।