Image description

গাইবান্ধার পাঁচটি আসনের মধ্য গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা-৪) সংসদীয় আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটি উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর বিভাগের আটটি জেলার প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত। এই আসনটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত। অর্থনীতির চাকা বেশ সচল। এই আসনটি ঘিরে সব দলের হিসাব। ১৭টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসন।

এই আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বড় দুই দলই। কারণ বিগত ১২টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি দুবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, স্বতন্ত্র দুবার ও জাসদ প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন।

গত বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। বর্তমানে তিনিসহ কিছু নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকলেও তার কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই বিএনপি-জামায়াতের ভোটব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। আবার অনেক নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী হিসেবে দাবি করছেন।

দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত-বিএনপি তাদের মধ্য সুসম্পর্ক ধরে রেখেছে। এখানে রাজনীতি নিয়ে দুই দলের মধ্য রেষারেষি নেই। বিভিন্ন প্রোগ্রামে দুই দলের নেতারা সৌহার্দ্যমূলক আচরণ করছেন। তবে সামনের দিনে ভোটের রাজনীতিতে এই দুই দলই হবে পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

অন্যদিকে বিএনপির কেউ কেউ অভিযোগ করছেন দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছে পদবাণিজ্য করছেন। সাধারণ মানুষ বিএনপির এসব হিসাব-নিকাশ কষলে ভোটের মাঠের হিসাবটাও হবে অন্যরকম।
এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সুস্থধারার রাজনীতির চর্চা রয়েছে। দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত-বিএনপি তাদের মধ্য সুসম্পর্ক ধরে রেখেছে। এখানে রাজনীতি নিয়ে দুই দলের মধ্য রেষারেষি নেই। বিভিন্ন প্রোগ্রামে দুই দলের নেতারা সৌহার্দ্যমূলক আচরণ করছেন। তবে সামনের দিনে ভোটের রাজনীতিতে এই দুই দলই হবে পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ভোটের মাঠে তাদের তীব্র লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির লড়াই সংগ্রাম, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এমন নেতাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পাবে। যারা সুদিনে দলের নাম ব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য আসে দুর্দিন এলেই দল ছেড়ে চলে যায়। কোনো কর্মীর খোঁজ রাখে না, তাদের বিষয়ে এবার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সজাগ।

মনোনয়নের জন্য অনেকেই লবিং করছেন। কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা সবাই একমঞ্চে কাজ করছেন।

উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজু বলেন, মনোনয়নের জন্য অনেকেই লবিং করছেন। কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করবে। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা সবাই একমঞ্চে কাজ করছেন।

এই আসনে বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রংপুর বিভাগ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক কবির আহম্মেদ (মেডিসিন ফারুক), সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিংকন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ওবায়দুল সরকার বাবলু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমেদসহ অনেকের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অন্যদিকে এ আসনে সাবেক জেলা জামায়াতের আমির ডা. আব্দুর রহিম সরকারকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। ডা. আব্দুর রহিম তার দলের কর্মী-সমর্থক নিয়ে দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি ভোটের জন্য দিনরাত মানুষের কাছে যাচ্ছেন।

ডা. আব্দুর রহিম সরকার বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলাম। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করেছি। এটুকু কথা বলতে চাই, নির্বাচিত হলে মানুষের ন্যায্য অধিকার বুঝে দেওয়ার জন্য লড়াই করবো। কোনো চাঁদাবাজকে চাঁদাবাজি করতে দেব না।’

আমি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলাম। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করেছি। এটুকু কথা বলতে চাই, আমি নির্বাচিত হলে মানুষের ন্যায্য অধিকার বুঝে দেওয়ার জন্য লড়াই করবো। কোনো চাঁদাবাজকে চাঁদাবাজি করতে দেব না।

এই আসনটি ১৯৮৪ সালে পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লুৎফর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে আতাউর রহমান লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির হয়ে বিজয়ী হন। মাঝে চার মাসের জন্য আব্দুল মান্নান মন্ডল বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে এম মোত্তালিব আকন্দ বিএনপির হয়ে আসনটি উদ্ধার করেন। পরে তিনি মারা গেলে তার বড় ছেলে শামীম কয়ছার লিংকন উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জয়লাভ করেন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ আসনটিতে জয়লাভ করেন। সীমাহীন অনিয়ম, গুম, খুন, অর্থপাচার, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে দেশ থেকে নেতাকর্মী রেখে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। তার নেতাকর্মীরাও অনেকেই আত্মগোপনে দেশে পালিয়ে আছেন, আবার অনেকেই দেশের বাইরে পাড়ি জমান।

এই আসনে পুরোনো ভোটার ৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৯ জন। এবার নতুন করে ভোটার হয়েছেন ২১ হাজার ৭৮৮ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৭ জন। এ আসনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৬৭ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।