অভিন্ন আইনে সংসদীয় পদ্ধতিতে একসঙ্গে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সুপারিশ দেবে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সুপারিশে থাকবে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের ওপর এমপিদের প্রভাব কমানোর প্রস্তাব। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে সংস্কার কমিশন।
আজ সোমবার আগারগাঁওয়ের জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি) ভবনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব নির্বাচন একসঙ্গে করা হলে খরচ ৬০০ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে যখন যাচ্ছি মানুষের কাছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রায়োরিটি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকা লেভেলের পলিটিশিয়ানদের মধ্যে এখনো কোনো কথা শুনিনি বা শোনা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘লোকাল লেভেলের মতামত হচ্ছে, তারা বলতে চাচ্ছে একটা শূন্যতার মধ্যে আছে। যার ফলে এখন লোকাল নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া উচিত। এটা স্থানীয় লোকদের মতামত।’
চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাচন ১৯৮৯ সালের পরে আর হয়নি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে স্পেসিফিক চিন্তা করেছি। এ ছাড়া কার্যকর করতে জেলা পরিষদে সরাসরি ভোট করা যায় কি না, সেটিও আমরা চিন্তা করছি।’
সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলেও জানান এই স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে সংবিধান পারমিট করে না। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেম্বার পদের ক্ষেত্রে সবাইকে সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে শিক্ষিত লোকেরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এটা পার্টটাইম হিসেবে তাঁরা করতে পারবেন। এ ছাড়া যুবকদের মেম্বার পদে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘মেম্বার পদ হচ্ছে জাতীয় রাজনীতির পাঠশালা।’
পৌরসভা বিলুপ্ত করার কথা প্রসঙ্গে ড. তোফায়েল বলেন, ‘পৌরসভার অবস্থা ভালো না। অনেকের বেতন বাকি। প্রয়োজনে থোক বরাদ্দ থেকে বকেয়া পরিশোধ করে পৌরসভাগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি না, সেটাও সংস্কার কমিশন ভাবছে।’
সংরক্ষিত নারী প্রতিনিধিদের বিষয়ে ড. তোফায়েল বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। নারী আসনে নির্বাচন ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে হতে পারে। তিনবার নির্বাচন হবে। চারবার থেকে সেখানে আর সংরক্ষিত নারী পদের প্রয়োজন নেই, এমনটা ভাবা হচ্ছে। ইউনিয়নে জনসংখ্যার আলোকে ওয়ার্ডসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষেও মত দেন তিনি।’
মতবিনিময় সভায় ২৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এবং নির্বাচন কমিশনের বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর।