Image description

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় তিন চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হওয়া ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন এবং দলীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃস্থাপন। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক  রক্ষা করা। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় এখন বিএনপির জন্য একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টপরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা বহু নেতাকর্মী এখনো যথাযথ মূল্যায়িত হচ্ছে না। কিছু ‘হাইব্রিড’ নেতা যারা পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছে; তারা বর্তমানে বিএনপির ভেতরে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও এমন নেতারা পদ-পদবি দখলে নিচ্ছেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ বাস্তবতায় দলের হাইকমান্ডকে সঠিক ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করতে হবে। না হয় দলে ভাঙন ও অনৈক্য সৃষ্টি হতে পারে। মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলে ধরে রাখার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এ ইস্যুতে যড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন দলের কেউ কেউ। যদিও এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ড সর্তক রয়েছে। এই নিয়ে এক এগারোর সময় যারা দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তারও একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা খোলা কাগজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্ত গেইম ইজ ওভার। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র আর সফল হবে না। সঠিক সময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, মনোনয়ন নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনাই হয়নি। ভোটের তফসিল ঘোষণা হলে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এত আগে এ নিয়ে আলোচনা করলে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন তৈরি হবে। তবে একটা বিষয়ে পরিষ্কার কারো মনোনয়নের জন্য কেউ তদবির করার সুযোগ থাকবে না। নিজের মনোনয়ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ত্যাগী, যোগ্য প্রার্থীকে এবার দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবারই খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। 

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের লন্ডনে বৈঠকের পর নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু হলেও আবার তা সংশয় দেখা দিয়েছে। খোদ বিএনপি নেতারাই এই নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বা জটিলতা সৃষ্টি হলে তা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে এই নিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিএনপির ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের যৌথ ঘোষণা নিয়ে বসে নেই। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। এমনটা তো নয়। প্রয়োজনে আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।   
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ দেশের অধিকাংশ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতির দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিচ্ছে। তাদের দাবির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য ধর্মালম্বী সংগঠনের নেতারাও সমর্থন জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি একদিকে ভোটের মাঠে ঐক্য গঠনের প্রয়োজনে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় এবং অন্যদিকে দলীয় আদর্শ ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা রক্ষার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। ফলে এ দুটি ভারসাম্য বজায় রাখাও দলটির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

গত শনিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ সমাবেশের আয়োজন করে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার পক্ষের জনসমুদ্র। 

এ ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোরালো দাবি তুলেছে জামায়াতও। এমন বক্তব্যকে ‘ভালো’ চোখে দেখছে না বিএনপি। নির্বাচন পদ্ধতি  নিয়ে এমন বক্তব্যকে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের একটি উদ্দেশ্য আছে। যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চান, তাদের একটি উদ্দেশ্য আছে। হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, না হয় বাংলাদেশে নির্বাচন না হওয়া। এটা তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না এরকম কোনো লক্ষণ আমি দেখছি না। শুধু শুধু এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দরকার তো নেই। আমি দেখছি নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে। সারা দেশ নির্বাচনে নেমে পড়েছে, সারা দেশের মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের জন্য। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারা তৈরি আছে। যে বিষয়টা হয় নাই এটাকে শুধু শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করে, আননেসেসারি আগামী নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে তো কোনো লাভ নাই। তিনি বলেন, আর দ্বিমত তো থাকবেই। যেকোনো প্রেক্ষাপটে দ্বিমত থাকবে। আপনি যখনই যেটা বলবেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বিমত থাকবে। এটাতে কোনো অসুবিধা নাই। দ্বিমত পোষক করার সকলের অধিকার আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, একেকজন একেকটা দাবি তুলে নির্বাচনকে পিছিয়ে, নির্বাচনের অবস্থা সর্বনাশ করে দিয়ে এ জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। সবাইকে অনুরোধ জানাব আউল-ফাউল কথাবার্তা বইলেন না কেউ। আপনারা এসব কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করবেন না।
তিনি বলেন, এভাবে বড় বড় সমাবেশ করে জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবেন না। সমাবেশ দিয়ে যদি প্রমাণ করা যায় কে কত জনপ্রিয়, আমরা সারা বাংলাদেশকে একদিনে সমাবেশের আওতায় আনতে পারি। সারা বাংলাদেশ একদিনে সমাবেশ করবে। কেউ কোনো জায়গা ছাড়বে না। এটা তো সিস্টেম হলো না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খোলা কাগজকে বলেন, বিএনপির গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল চায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর নির্বাচনের একটা যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। এখন যদি সঠিক সময়ে নির্বাচন না দিতে চায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা তো আর হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে না। সময়ের প্রয়োজনে যা করার দরকার তাই করবে।