Image description

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বহুল আলোচিত ‘মাসদার হোসেন’ মামলার প্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি অনুমোদনের আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একইসাথে আদালত বলেন, এ রায়ের ফলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে রুল শুনানিতে আর কোনো বাধা থাকলো না।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলা হিসেবে পরিচিত ‘মাসদার হোসেন’ মামলায় ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগ ১২ দফা নির্দেশনা দিলেও, তা পরবর্তী কোনো সরকার বাস্তবায়ন করেনি।

ওয়ান-ইলেভেনের সময় কেবলমাত্র বিচারক নিয়োগের জন্য গঠন করা হয় ‘জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন’। মামলার রায়ে বলা হয়, বিচারকরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলেও তারা প্রশাসনিক কাঠামো থেকে স্বতন্ত্র—তাই তাদের শৃঙ্খলাবিধিও আলাদা হতে হবে।

এই শৃঙ্খলাবিধি ঘিরেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। পরে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে দিয়ে নিম্ন আদালতের বিচারদের শৃঙ্খলাবিধির অনুমোদন নিয়ে নেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিধিমালায় সুপ্রিম কোর্টের প্রাধান্য খর্ব করে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়। আপিল বিভাগ ‘মাসদার হোসেন’ মামলায় অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি অনুমোদন করার কারণে হাইকোর্ট বিভাগ ১১৬ অনুচ্ছেদের রিট মামলার শুনানিতে জটিলতা হতে পারে উল্লেখ করে গত মাসে রিভিউ আবেদন করা হয়। রোরবার যার রায় দিলেন আপিল বিভাগ।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘অতীতে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশ ছিল, সেজন্য শৃঙ্খলাবিধি আমরা চ্যালেঞ্জ করা সত্ত্বেও হাইকোর্টের সামনে একটা প্রশ্ন ছিল যে, সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশকে রেখে হাইকোর্ট এই মামলা শুনানি করতে পারবে কিনা। ফলে আজকের এই আদেশের মাধ্যমে ওই বাধাটাও দূরীভূত হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের যদি স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে এই ধরনের শৃঙ্খলাবিধি কার্যকর রেখে কোনোভাবেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্যই আমরা এই অর্ডারকে রিভিউ চেয়েছিলাম, এজন্য স্থগিত হয়েছে।’

এ রায়ের ফলে কী হবে তা জানতে চাইলে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘এখন ১১৬ অনুচ্ছেদের রুল শুনানিতে আর কোন বাধা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারপতি (সাবেক) জনাব আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সেই আদেশটিকে আদালত স্থগিত করে দিয়েছেন। একই সাথে নিম্ন আদালতের যে শৃঙ্খলাবিধি আছে, তা কার্যকর থাকবে। এবং একইভাবে আমাদের হাইকোর্ট বিভাগে যে রিট পিটিশনটি শুনানি হচ্ছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে, এই শুনানি যথাযথভাবে চলবে। এই তিনটি আদেশের মাধ্যমে আজকের এই রিভিউ পিটিশনটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং লিভ গ্রান্ট (Leave Grant) করা হয়েছে।’