Image description
ঝুলছে ৭ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

দুই মাসেই নষ্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড। কোনোটি খুলে যাচ্ছে, কোনোটি ফেটে যাচ্ছে। প্রিন্টের মান খারাপ। ছবি অস্পষ্ট। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। বিআরটিএ দায় স্বীকার করলেও নিচ্ছে না ব্যবস্থা।

কার্ডপ্রতি ৭০২ টাকা নিয়েও নিম্নমানের স্মার্ট কার্ড বিতরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা যায়, বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডপ্রতি ৭০২ টাকা নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে (এমএসপি) দিচ্ছে ৩০০ টাকা। বাকি টাকা বিআরটিএর।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মো. ফয়সাল কবির চৌধুরী। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে বলেন, পার্টে পার্টে খুলে যাচ্ছে। চার ভাগ হয়ে গেছে। ১০ বছর মেয়াদি এই কার্ড এক বছরও হয়নি। এর মধ্যেই এ অবস্থা। রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল হান্নানও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমি কার্ড পেয়েছি ৬ থেকে ৭ মাস হবে। এর মধ্যেই তিন ভাগ হয়ে গেছে। ছবি অস্পষ্ট। ১০ বছর মেয়াদি কার্ড এক বছরও গেল না। ইয়াসিন হোসাইন নেরু নামে আরেকজন খুলে যাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে বলেন, এই হচ্ছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোয়ালিটি। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের কোয়ালিটি এত বাজে হয়? হাসান মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে স্মার্ট কার্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত নিম্নমানের প্রিন্টিং আর কার্ড আমার জীবনেও দেখিনি। আমার ছবি আমিই চিনতে পারছি না। ছবিতে নিজেকে ‘চোর চোর’ মনে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ রয়েছে আর এক মাস।

২৮ জুলাই পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তির সম্ভাবনা নেই। শেষ মুহূর্তে কার্ড ছাপানো নিয়ে গড়িমসি রয়েছে। বিআরটিএর পক্ষ থেকে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে বিআরটিএ কার্ড আটকে রাখার কারণে কার্ড ছাপানো যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই এমএসপি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বিআরটিএ। চুক্তির দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ২৪ লাখ কার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে কার্ড সরবরাহ করেছে মাত্র ১৬ লাখের মতো। চুক্তির দিন থেকে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কাজ করবে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ লাখ কার্ড প্রিন্ট করে সরবরাহ করার কথা ছিল। এর জন্য বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তি হয় ১২০ কোটি টাকা। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২৮ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছে। বাকি কার্ড সরবরাহের জন্য সময় আছে মাত্র এক মাস। যদিও এখন পর্যন্ত ৭ লক্ষাধিক নতুন আবেদন জমা পড়ে আছে। ফলে পুরোনো জট কমানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এমএসপি এইচআর ম্যানেজার আশরাফ উদ্দিন মোস্তফা বলেন, আমরা খুব কম টাকায় কার্ড প্রিন্ট করে থাকি। গুণাগুণ খুব ভালো। এই কার্ডটা হচ্ছে পলিকার্বনেট। নিরাপত্তার বিষয়টি বিআরটিএ দেখেছে। স্যাম্পল দেখে বিআরটিএ অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। বিআরটিএ যেটা দেখেছে সেটাই আমরা প্রিন্ট দিচ্ছি। এটা লেজার প্রিন্টিং, তাই লেখা উঠবে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাখ লাখ কার্ডের বিপরীতে দুই একটা কার্ড এমন হইতে পারে। বিআরটিএর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পলিকার্বনেট কার্ড দিচ্ছি। বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, প্রিন্টে গ্রাহকের ছবি পরিষ্কার বোঝা যায় না এমন অভিযোগ পেয়েছি। তবে আপনি যেহেতু দেখিয়েছেন এখন আমরা বিশ্বাস করছি। কার্ডের মান খারাপ দেখে আমরা তিন লাখ স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট না দিয়ে আটকে রেখেছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।