গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নেওয়া বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের দৃশ্যমান সফলতা এখনও নেই। যদিও গত ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি বাসের চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক জানান, এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাস চলাচলের মধ্যেও জুনে বাকি কাজ শেষ হওয়ার কথা জানান তিনি।২০১১ সালে বিআরটি প্রকল্প নেওয়ার পর তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রকল্প কর্মকর্তারা নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়ে বহুবার ভোগান্তি নিরসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন কয়েকবার। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেননি। ওই সময় বিশেষ বাস পরিচালনার জন্য ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল) গঠন করা হয়েছে। তারা বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি পথে বিশেষায়িত বাসসেবা ‘ঢাকা লাইন’ চালুর ঘোষণা দেয়।
তবে ১৩৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস কেনার দরপত্র আহ্বান করেও তা পারেনি। অভিযোগ আছে, ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে একটি দরদাতা কোম্পানির সঙ্গে সাবেক সেতুমন্ত্রীর পরিবারের লোকজন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। নানা সমালোচনায় দুইবার দরপত্র বাতিলের পর এখন বিআরটি বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে প্রক্রিয়াটি। অনুমোদন শেষে অনাপত্তি দিলে বাস আসতে আরও সময় লাগবে।এ বিষয়ে ডিবিআরটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ। নো অবজেকশন সনদ পেলে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এরপর বাস আমদানি সম্ভব।জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালে। চার বছরের মধ্যে আধুনিক জোড়া লাগানো বড় বাস চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিআরটি দিয়ে ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। যানজট, সিগন্যাল কিংবা অন্য কোনো বাধায় বাস আটকে থাকবে না। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। তিন দফা সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে গার্ডার চাপাসহ দুর্ঘটনায় ছয়জন মারা গেছেন। লাখ লাখ মানুষকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ফ্রান্স সরকারের সফট লোনে বাংলাদেশের বিআরটি-৬ লাইনের (ঢাকা-গাজীপুর) জন্য ১৩৭টি ডিজেল বাসের ব্যবস্থা রেখে ২০১২ সালে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পে বাস সার্ভিস শুরু হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বিনা বাধায় যাত্রীরা এসি বাসে চলাফেরা করতে পারতেন এবং এতে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যেত। ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি এসি ডিজেল বাস ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান করে বিআরটি কর্তৃপক্ষ। সাবেক সড়ক মন্ত্রী-সচিব এবং শেখ সেলিম এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দরপত্রটি বাতিল হয়ে যায়। পরে সরকার এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এএফডির অনুমোদনক্রমে কর্তৃপক্ষ গত বছর ১০ জুন দ্বিতীয় দরপত্র আহ্বান করে। একটি চীনা কোম্পানি টেকনিক্যাল এবং আর্থিকভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। এই দরে কেনার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এএফডি তাদের বরাবরে কার্যাদেশ দিতে সুপারিশ করে।
এদিকে বাসগুলো কেনার জন্য দরপত্র কেন্দ্র করে পৃথক দুটি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের করা অপর রিট খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর আপিল করলেও এ নিয়ে আপাতত আইনি সমস্যা নেই বলে জানান সংস্থার কর্মকর্তারা।অবশ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিআরটিসি থাকার পরও একটি পথে কিছু বাস চালানোর আলাদা কোম্পানি গঠন করা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, কোম্পানির এমডিসহ ২৪ জন স্থায়ী জনবল লাগবে। এর বাইরে অস্থায়ীভাবেও লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাতে হবে। ফলে কোম্পানিটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় কি না, সে আলোচনাও আছে। প্রথমে বিআরটিসির ১০টি বাস দিয়ে চালু হয়। এখন এর সংখ্যা ১২টি। তবে বিআরটিসির বাস দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই দ্রুত বিশেষ বাস চালু করা সমীচীন বলে অভিমত দেন অনেকে।