Image description
 

নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর বিএনপির সভাপতির সভাপতি খোকন আহম্মেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে সেনাবাহিনী।গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পৌরশহরের বাদে আঠারো বাড়ি এলাকায় খোকন আহম্মেদের মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে চালগুলো জব্দ করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যান বিএনপির ওই নেতা।

আজ শনিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মদন অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ভিজিএফের মাধ্যমে দরিদ্রদের বিতরণের জন্য দেওয়া বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে মজুদ করে রাখেন খোকন আহম্মেদ। গোপনে এমন খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে কেন্দুয়া পৌরশহরের বাদে আঠারো বাড়ি এলাকায় থাকা মেসার্স নাহার ট্রেডার্সে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানের খবর পেয়ে একটি হ্যান্ডট্রলি করে এসব চাল গুদাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই বিএনপি নেতা।

এ সময় হ্যান্ডট্রলিটি স্থানীয় বঙ্গানিয়া মোড় থেকে আটক করে পুনরায় ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নিয়ে আসা হয়। পরে ৩০৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি। এসব চালের বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩০ টাকা বলে জানা গেছে।

অভিযানের সময় খোকন আহম্মেদকে মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। ফলে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

জব্দকৃত চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা, নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল বলে জানা গেছে।

বর্তমানে জব্দ করা চাল কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকন আহম্মেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। যা নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে সেনা কর্মকর্তা জামিউল ইসলাম সাকিব বলেন, ‘জব্দকৃত হ্যান্ডট্রলিতে ৩০৪ বস্তা সরকারি আতব চাল ছিল। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে এসব চাল দেওয়া হয়েছিল। হ্যান্ডট্রলিতে নিচে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি বস্তা, আর উপরে কিছু সাদা বস্তায় চালগুলো রেখে নিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে থাকা লোকজন বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে বলেছে-বিতরণের পর বেচে যাওয়া এসব চাল তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিনেছেন। অনুমতি থাকলে তারা চালগুলো এভাবে লুকিয়ে নিয়ে যাবে কেন? এটাও প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘বেচে যাওয়া চাল বিক্রি করার নিয়ম আছে কি না- বিষয়টা জানতে হবে। এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ছুটিতে আছেন। এলাকায় ফিরলে এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলব।’

সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গুদামের মালিক খোকন আহম্মেদকে মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। উপস্থিত দুইজনকে আটক করা হলেও তাদেরকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে খোকন আহম্মেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যা।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, জব্দকৃত চালগুলো উপজেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। ঘটনাটি শুনেছি। এলাকায় ফিরে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’