দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়ে পড়া ইরান-ইসরাইলের যুদ্ধ শিগগিরই থামছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে ইসরাইলকে ইরানে হামলা বন্ধের অনুরোধ করা ‘খুব কঠিন’। তিনি আবারও বলেন, ‘এটা এখন থামানো খুবই কঠিন। যখন আপনারা দেখছেন যুদ্ধে ইসরাইলই ভালো করছে। আমি মনে করি, আপনিও বলবেন যে ইরান কম ভালো করছে। যে কাউকেই থামানো এখন একটু কঠিনই।’ শুক্রবার নিউজার্সির এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এদিন সকালেই ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শহরটিতে আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া বাড়িঘরগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরাইলের সোরোকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সাতজন হতাহত হয়েছে। তবে কারও অবস্থাই গুরুতর নয়। এর আগের দিনও ইরানি হামলার কবলে পড়েছিল হাসপাতালটি। তবে ইরানের এ দিনের হামলায় একটি আবাসিক এলাকার একটি সড়কে বিশাল গর্ত তৈরি হয় এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া বিস্ফোরণে একটি আবাসিক ভবনের বারান্দা ধ্বংস হয়ে গেছে। আশপাশের অনেক ভবনের জানালা চুরমার হয়ে গেছে। কাচের টুকরা ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। পুলিশের সঙ্গে মাগেন ডেভিড অ্যাডোম এবং হোম ফ্রন্ট কমান্ডের উদ্ধারকর্মীরা বাসিন্দাদের নিরাপদ কক্ষে সরিয়ে নেন। বীরশেবার মেয়র রুভিক দানিলোভিচ বলেছেন, ‘বাসিন্দারা সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষিত কক্ষে আশ্রয় নেওয়ায় অনেকের জীবন বেঁচে গেছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু বাসিন্দারা হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশনা মেনে নিরাপদে ছিলেন।’ এর আগে রাতে ইসরাইলের বিমানবাহিনী ইরানি তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করে এবং হাইফায় একটি ড্রোন আটকে দেয় বলে জানিয়েছে তেল আবিব। শুক্রবার দিনেরে বেলায়ও হাইফাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এক সপ্তাহে ইরান ইসরাইলে ৪৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং প্রায় ১,০০০ ড্রোন ছুড়েছে।
পাল্টা হামলায় ইসরাইলের বিমানবাহিনী ইরানের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং একটি পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। ৬০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ১২০টিরও বেশি গোলাবারুদ দিয়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকেন্দ্র, ইস্পাহান এবং তেহরানে ইরানি প্রতিরক্ষা ব্যাটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিল্পকেন্দ্র, এসপিএনডি প্রকল্পের সদর দপ্তর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সুবিধা। ইসরাইলের দাবি, এ কেন্দ্রগুলো ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল অবকাঠামো। তেহরানের একটি হাসপাতালে এদিন আবারও ইসরাইলি বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সাত দিনের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনে ইসরাইল ছয়টির বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। গিশা এলাকায় আবাসিক একটি ভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা আসরিরান এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল এবং তারা ইরানি আকাশসীমায় সম্পূর্ণ মুক্তভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবাহিনী। এ সময় ইরাকে আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে জাতিসংঘে অভিযোগ তুলেছেন দেশটির প্রতিনিধি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ঠিক আগে ইরাকের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে ৫০টি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। জাতিসংঘ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্বাস কাজম ওবায়েদ আল-ফাতলাওয়ি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত অঞ্চল থেকে এসেছিল। তিনি জানান, প্রথমে ২০টি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করে। পরে আরও ৩০টি ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যায়। এ বিমানগুলো বসরা, নাজাফ ও কারবালা শহরের আকাশসীমা অতিক্রম করে।
আল-ফাতলাওয়ি আরও বলেন, আকাশসীমা লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘পবিত্র স্থান ও অঞ্চলগুলোর ওপর এ ধরনের হুমকি আমাদের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, এসব ধর্মীয় স্থান আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ক্ষতিপূরণ তহবিলের তথ্যফাঁস : ইসরাইলের ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। দেখা গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিনের হামলায় প্রায় ৩০ হাজার ভবনের মালিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। আট হাজারেরও বেশি ইসরাইলি নাগরিক গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার ইরানের ফার্স নিউজ, ইসরাইলের জেরুজালেম পোস্ট ও ওয়াইনেটের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষতিপূরণের দাবিতে ইসরাইলের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন-এই ইঙ্গিতে নেতানিয়াহু ও তার জোট গভীর হতাশায় পড়ছেন। কারণ, নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন। শুক্রবার গিডিওন লেভি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।’
ক্ষতিপূরণ তহবিলের তথ্যফাঁস : ইসরাইলের ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। দেখা গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিনের হামলায় প্রায় ৩০ হাজার ভবনের মালিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। আট হাজারেরও বেশি ইসরাইলি নাগরিক গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার ইরানের ফার্স নিউজ, ইসরাইলের জেরুজালেম পোস্ট ও ওয়াইনেটের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষতিপূরণের দাবিতে ইসরাইলের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন-এই ইঙ্গিতে নেতানিয়াহু ও তার জোট গভীর হতাশায় পড়ছেন। কারণ, নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন। শুক্রবার গিডিওন লেভি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।’
ইসরাইল-ইরান সংঘাত ইস্যুতে শুক্রবার ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে জেনেভায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত হন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। আলোচনা শেষে বলেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ হয়ে গেলে ইরান আবারও কূটনীতি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। আগ্রাসনকে তার জঘন্য অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৈঠকের আগেও আরাঘচি বলেছিলেন, ‘ইসরাইল হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলেচনা নয়। আমি জেনেভায় যাচ্ছি আলোচনার জন্য নয়। শোনার জন্য।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আজ গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। আমরা এটি অব্যাহত রাখব।’ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার আলোচনায় ফিরে আসার জন্যও ইরানি প্রতিনিধিদলের কাছে আবেদন রেখেছেন বলেও জানান তিনি। ল্যামি আরও বলেন, ইউরেনিয়ামের ‘শূন্য সমৃদ্ধিকরণ’ ইস্যুতে তিনি এবং ইউরোপীয় ইউিনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘খুবই স্পষ্ট’ ছিলেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এদিন বৈঠকে বসে ইরান-ইসরাইলের অংশগ্রহণে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিট) আলোচনা চলছিল। পরিষদে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত আমির-সাইদ ইরাভানি তার দেশে ইসরাইলের হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ওপর জোর দেন। একপর্যায়ে বোমা হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবি তুলে ধরেন তিনি।
ইরাভানি বলেন, ‘লাইভ সম্প্রচারের সময় ইসরাইল জাতীয় সম্প্রচারক আইআরআইবিতে যেদিন হামলা চালিয়েছিল, সেদিনই কমপক্ষে দুই গর্ভবতী নারী এবং তাদের অনাগত শিশু নিহত হয়েছে।’ তার ওই বক্তব্যের পালটা জবাব দেন ইসরাইলি দূত ড্যানি ড্যানন। বলেন, ‘জনাব ইরাভানি, আপনি কোনো শিকার নন, এমনকি প্রকৃত কূটনীতিকও নন। আপনি একজন নেকড়ে, যে নিজেকে কূটনীতিক সাজিয়ে রেখেছেন। আমরা আর সেই ভান করছি না। আপনারা নিজেরাই যখন গণহত্যা চালাচ্ছেন, তখন নিজেদের রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলার সাহস কীভাবে হলো।